vip
1:07 PM
Sunday, March 30, 2014
vip
12:30 PM
আহম্মদ আলী ১৯৩৫-১৯৯৯)
জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম ও স্বদেশ স্বাধীনতার বীর যোদ্ধা,ভাষা সংগঠক, গণমানুষের প্রিয় নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আহম্মদ আলী । ………আহম্মদ আলী (১৯৩৫-১৯৯৯) ঃ বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজ সেবক। এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) মরহুম আহম্মদ আলী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি মেহেরপুর-১ আসন থেকে ৩ বার এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৩৫ সালের ১৪ই এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মরহুম তমিজউদ্দিন আহমেদ। দেশ বিভাগের পর তিনি মেহেরপুরের কাঁসারীপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪ সালে ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী’র নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে চট্টগ্রামে ছাত্র-কর্মী শিবিবের আহবায়ক ছিলেন। ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম আহবায়ক নির্বাচিত হন। এই বছরই তিনি বি.এ পাশ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ শেষ বর্ষে অধ্যয়নকালে মওলানা ভাসানীর ‘ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি’তে যোগদান করেন এবং সফলতার সাথে এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ‘৬৮-৬৯ সালে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর (ন্যাপ) গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অন্যতম সংগঠক ছিলেন। এসময় আইযুব বিরোধী গণ-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের এক পর্যায়ে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৭১ সালে তিনি ভারতে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি মেহেরপুর বণিক সমিতির সভাপতি ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। তৎকালীন ইউপিপি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন। ১৯৭৯ সাল থেকে পরবর্তী পর্যায়ে তিনি জাতীয় সংসদের মেহেরপুর -১ আসন থেকে ৩ বার এমপি নির্বাচিত হন। ৯ই ফেব্র“য়ারী ১৯৯৯ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তিনি এমপি হোষ্টেলে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লে ঢাকা ডায়াবেটিস হাসপাতালে ভর্তি হন। ৪ দিন অচৈতন্য থাকার পর তিনি ১৩ ফেব্র“য়ারী ১৯৯৯ শনিবার ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। এ অঞ্চলের উন্নয়নে তার ভূমিকা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য তাকে ১৯৮০ সালে একুশে পদক প্রদান করা হয়।
vip
12:25 PM
মোহাম্মদ সহিউদ্দিন (১৯২৩-১৯৯০)
মোহাম্মদ সহিউদ্দিনঃ বিশিষ্ট সংগঠক, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা ও সমাজসেবক
স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিশিষ্ট সংগঠক, সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা ও সমাজসেবক। তিনি ১৯৭৫ সালে মেহেরপুর জেলার গভর্নর নিযুক্ত হন।
বিভাগপূর্ব মেহেরপুরের তেহট্ট থানার বেতাইলাল গ্রামে তিনি ১৯২৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ইয়াকুব হোসেন বিশ্বাস। দেশ বিভাগের পরপরই সহিউদ্দিন মেহেরপুরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি এই দলের সাথে জড়িত হন। তিনি ষাটের দশকে মেহেরপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ছয় দফা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ১৯৭০ সালে মেহেরপুর থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৫ সালে মেহেরপুর জেলার গর্ভনর নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৮৬ সালে পুনরায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন।
বিনম্র ব্যক্তিত্বের অধিকারী সহিউদ্দিন পঞ্চাশের দশকে ছাত্র জীবনে রাজনীতি শুরু করেন। ব্যক্তিগত জীবনে নিরহঙ্কারী সহিউদ্দিন তাঁর সততা ও ত্যাগের জন্য বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায় সর্বজনপ্রিয় ছিলেন। মেহেরপুরের অবিসংবাদিত নেতা সহিউদ্দীন ৬৭ বছর বয়সে ১৯৯০ সালে ২১ মার্চ ইন্তেকাল করেন।
তাঁর মৃত্যুর পরপরই জেলার সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। হাজার হাজার লোক গ্রাম থেকে ছুটে আসে মরহুম নেতার বাসভবনে। জেলা প্রশাসক ঐদিন সরকারী অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করেন। বাজার কমিটি সকল দোকান ও কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। মেহেরপুর প্রেস ক্লাবে মরহুম নেতার স্মরণে শোক বই খোলে। শহরে শোক মিছিল বের হয় এবং স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। এ অঞ্চলের সকল দল ও মতের হাজার হাজার মানুষ জননেতার জানাজায় শরিক হন। মেহেরপুরের শামসুজ্জোহা পার্কে এ মহান নেতার পাথরে খোদায়ই করা ছবি টাঙানো রয়েছে। মেহেরপুর তথা এতদঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিহাসে সহিউদ্দিন একটি ঐতিহাসিক নাম। মেহেরপুরের উন্নয়নে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রেখেছিলেন। তাঁর অবদান এলাকাবাসী যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে।
গ্রন্থনা : মুহাম্মদ রবীউল আলম
বিভাগপূর্ব মেহেরপুরের তেহট্ট থানার বেতাইলাল গ্রামে তিনি ১৯২৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ইয়াকুব হোসেন বিশ্বাস। দেশ বিভাগের পরপরই সহিউদ্দিন মেহেরপুরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি এই দলের সাথে জড়িত হন। তিনি ষাটের দশকে মেহেরপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ছয় দফা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ১৯৭০ সালে মেহেরপুর থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৫ সালে মেহেরপুর জেলার গর্ভনর নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৮৬ সালে পুনরায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন।
বিনম্র ব্যক্তিত্বের অধিকারী সহিউদ্দিন পঞ্চাশের দশকে ছাত্র জীবনে রাজনীতি শুরু করেন। ব্যক্তিগত জীবনে নিরহঙ্কারী সহিউদ্দিন তাঁর সততা ও ত্যাগের জন্য বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায় সর্বজনপ্রিয় ছিলেন। মেহেরপুরের অবিসংবাদিত নেতা সহিউদ্দীন ৬৭ বছর বয়সে ১৯৯০ সালে ২১ মার্চ ইন্তেকাল করেন।
তাঁর মৃত্যুর পরপরই জেলার সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। হাজার হাজার লোক গ্রাম থেকে ছুটে আসে মরহুম নেতার বাসভবনে। জেলা প্রশাসক ঐদিন সরকারী অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করেন। বাজার কমিটি সকল দোকান ও কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। মেহেরপুর প্রেস ক্লাবে মরহুম নেতার স্মরণে শোক বই খোলে। শহরে শোক মিছিল বের হয় এবং স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। এ অঞ্চলের সকল দল ও মতের হাজার হাজার মানুষ জননেতার জানাজায় শরিক হন। মেহেরপুরের শামসুজ্জোহা পার্কে এ মহান নেতার পাথরে খোদায়ই করা ছবি টাঙানো রয়েছে। মেহেরপুর তথা এতদঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিহাসে সহিউদ্দিন একটি ঐতিহাসিক নাম। মেহেরপুরের উন্নয়নে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রেখেছিলেন। তাঁর অবদান এলাকাবাসী যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে।
গ্রন্থনা : মুহাম্মদ রবীউল আলম
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব
12:18 PM
মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন
মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন (১৮৭০-১৯৩৭)
ধর্ম প্রচারক, লেখক ও সমাজসেবক। জন্ম গাঁড়াডোব গ্রাম, মেহেরপুর ১৫ মাঘ, ১২৭৭ (১৮৭০)। নিষ্ঠাবান মুসলিম পরিবারে জন্ম। বাল্যকালে নামাজ-রোজা ইত্যাদি ইসলামিক বিধিবিধান নিয়মিতভাবে পালন। কৃষ্ণনগর নার্মাল স্কৃলে পাঠকালে খ্রিস্টান
মিশনারিদের সংস্পর্শে এসে ১৮৮৭-তে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ। নর্মাল পাঠসমাপ্ত করে খ্রিস্টান পাদ্রিদের সহায়তায় ১৮৯১-তে এলাহাবাদ সেন্ট পলস ডিভিনিটি কলেজে ভর্তি। এ কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে হায়ার গ্রেড অব থিয়লজি ডিগ্রি লাভ (১৮৯৩)। কলকাতা ক্যাথিড্রাল মিশন ডিভিনিটি কলেজে কিছুকাল অধ্যয়ন। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খ্রিস্টধর্ম তত্ত্ব এবং সংস্কৃত, আরবি, গ্রিক, হিব্র“ ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষা গ্রহণ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে খ্রিস্টধর্ম প্রচারে আত্মনিয়োগ। কিছুকাল পরে বাইবেলের অকৃত্রিমতা সম্বন্ধে মনে সংশয় দেখা দেয়ার খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ করে আবার ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ। এরপর স্বীয় গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতার কর্মে যোগদান। কিছুকাল পর এ কর্ম ত্যাগ করে মুুন্সী মেহেরুল্লাহর সহচর হিসেবে ইসলাম ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ। খ্রিস্টান
মিশনারিরা ইসলাম ধর্মকে আক্রমণ করে যে সব পুস্তক -পুস্তিকা প্রকাশ করেন তার প্রতিবাদে পুস্তক রচনা করে খ্যাতি অর্জন। ইসলামের সত্য ও সৌন্দর্যের অন্বেষণই তাঁর লেখার বিষয়বস্তু। গ্রন্থ: আমার জীবনী ও ইসলাম গ্রহণ বৃত্তান্ত (১৩০৪), হজরত ইসা কে? (১৩০৬), ইসলামী বক্তৃতা (১৩১৪),
মেহের-চরিত (১৩১৫), শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (দঃ) ও পাদরীর ধোকাভঞ্জন (১৩২৩), ইঞ্জিলে হজরত মোহাম্মদ (দঃ) ও পাদরী ওয়েঙ্গার সাহেবের সাক্ষ্য (১৩২৩), ইঞ্জিলে হজরত মোহাম্মদ (দঃ) ও পাদরী রাউস সাহেবের সাক্ষ্য (১৩৩২), এষড়ৎু ড়ভ ওংষধস (১৯২৯) ইত্যাদি। ইসলাম ধর্মের একজন বিশিষ্ট প্রচারক ও সেবক। তেজস্বী ওয়াজকারী হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ। ইসলামের আদর্শ প্রচার ও খৃষ্টান ধর্মের অসারতা প্রমান করে তিনি ৪৫টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ঐসব গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি মুসলমান সমাজকে রক্ষা করার জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তা খুবই উল্লেখযোগ্য। এ অঞ্চলের মুসরিম সমাজ তার কাছে চিরঋণী। মৃত্যু গাঁড়াডোব, ২ জুন, ১৯৩৭ (আষাঢ় ১৩৪৪)।
গ্রন্থনা : মুহাম্মদ রবীউল আলম
ধর্ম প্রচারক, লেখক ও সমাজসেবক। জন্ম গাঁড়াডোব গ্রাম, মেহেরপুর ১৫ মাঘ, ১২৭৭ (১৮৭০)। নিষ্ঠাবান মুসলিম পরিবারে জন্ম। বাল্যকালে নামাজ-রোজা ইত্যাদি ইসলামিক বিধিবিধান নিয়মিতভাবে পালন। কৃষ্ণনগর নার্মাল স্কৃলে পাঠকালে খ্রিস্টান
মিশনারিদের সংস্পর্শে এসে ১৮৮৭-তে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ। নর্মাল পাঠসমাপ্ত করে খ্রিস্টান পাদ্রিদের সহায়তায় ১৮৯১-তে এলাহাবাদ সেন্ট পলস ডিভিনিটি কলেজে ভর্তি। এ কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে হায়ার গ্রেড অব থিয়লজি ডিগ্রি লাভ (১৮৯৩)। কলকাতা ক্যাথিড্রাল মিশন ডিভিনিটি কলেজে কিছুকাল অধ্যয়ন। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খ্রিস্টধর্ম তত্ত্ব এবং সংস্কৃত, আরবি, গ্রিক, হিব্র“ ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষা গ্রহণ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে খ্রিস্টধর্ম প্রচারে আত্মনিয়োগ। কিছুকাল পরে বাইবেলের অকৃত্রিমতা সম্বন্ধে মনে সংশয় দেখা দেয়ার খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ করে আবার ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ। এরপর স্বীয় গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতার কর্মে যোগদান। কিছুকাল পর এ কর্ম ত্যাগ করে মুুন্সী মেহেরুল্লাহর সহচর হিসেবে ইসলাম ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ। খ্রিস্টান
মিশনারিরা ইসলাম ধর্মকে আক্রমণ করে যে সব পুস্তক -পুস্তিকা প্রকাশ করেন তার প্রতিবাদে পুস্তক রচনা করে খ্যাতি অর্জন। ইসলামের সত্য ও সৌন্দর্যের অন্বেষণই তাঁর লেখার বিষয়বস্তু। গ্রন্থ: আমার জীবনী ও ইসলাম গ্রহণ বৃত্তান্ত (১৩০৪), হজরত ইসা কে? (১৩০৬), ইসলামী বক্তৃতা (১৩১৪),
মেহের-চরিত (১৩১৫), শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (দঃ) ও পাদরীর ধোকাভঞ্জন (১৩২৩), ইঞ্জিলে হজরত মোহাম্মদ (দঃ) ও পাদরী ওয়েঙ্গার সাহেবের সাক্ষ্য (১৩২৩), ইঞ্জিলে হজরত মোহাম্মদ (দঃ) ও পাদরী রাউস সাহেবের সাক্ষ্য (১৩৩২), এষড়ৎু ড়ভ ওংষধস (১৯২৯) ইত্যাদি। ইসলাম ধর্মের একজন বিশিষ্ট প্রচারক ও সেবক। তেজস্বী ওয়াজকারী হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ। ইসলামের আদর্শ প্রচার ও খৃষ্টান ধর্মের অসারতা প্রমান করে তিনি ৪৫টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ঐসব গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি মুসলমান সমাজকে রক্ষা করার জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তা খুবই উল্লেখযোগ্য। এ অঞ্চলের মুসরিম সমাজ তার কাছে চিরঋণী। মৃত্যু গাঁড়াডোব, ২ জুন, ১৯৩৭ (আষাঢ় ১৩৪৪)।
গ্রন্থনা : মুহাম্মদ রবীউল আলম
Friday, March 28, 2014
recent
12:56 PM
মেহেরপুরের প্রচলিত প্রবাদ ও বচন
মেহেরপুরের সমগ্র অঞ্চলেই কমবেশী বিভিন্ন প্রবাদ ও বচনের প্রচলন রয়েছে। এ সকল প্রবাদ ও বচন সাধারণতঃ অশিক্ষিত রমণীরা তাদের দৈনন্দিন পারিবারিক জীবনে কথোপকথের প্রসঙ্গে ব্যবহার করে থাকেন। প্রচলিত প্রবাদ ও বচনের কয়েকটি উপমা এখানে তুলে ধরা হলোঃ-
(১) গাঁয়ের মধ্যে হুলস্থুল, জানেনা আমার আবদুল।
(২) ভাইয়েত ভাত, ভাজের হাত।
(৩) লোহায় লোহায় এক হবে, কামার শালা পর হবে।
(৪) পারেনা সুঁচ গড়াতে, যায় বন্দুকের বায়না নিতে ।
(৫) মাওড়া নিও সাথে ঝাঁটা নিও হাতে ।
(৬) কে বুলিছে কিসের কথা পা দি চুলকাই মাথা ।
(৭) যে আমার তেলের চুল নেইতো বালের ঝুটি ।
(৮) বাড়ি নষ্ট করে বুড়ি পেট নষ্ট করে মুড়ি ।
(১) গাঁয়ের মধ্যে হুলস্থুল, জানেনা আমার আবদুল।
(২) ভাইয়েত ভাত, ভাজের হাত।
(৩) লোহায় লোহায় এক হবে, কামার শালা পর হবে।
(৪) পারেনা সুঁচ গড়াতে, যায় বন্দুকের বায়না নিতে ।
(৫) মাওড়া নিও সাথে ঝাঁটা নিও হাতে ।
(৬) কে বুলিছে কিসের কথা পা দি চুলকাই মাথা ।
(৭) যে আমার তেলের চুল নেইতো বালের ঝুটি ।
(৮) বাড়ি নষ্ট করে বুড়ি পেট নষ্ট করে মুড়ি ।
Labels:recent
recent
recent
12:38 PM
বিশেষ অর্জন
মেহেরপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালঃ
জনাবমোঃ জামাল উদ্দীন আহমেদ, জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর গত ০৫ মার্চ, ২০১০ তারিখেমেহেরপুর সার্কিট হাউজ রোডে মেহেরপুর ডায়াবেটিস হাসপাতাল স্থাপন করেন।ডায়াবেটিস রোগীদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় ক্যাম্পিং করাহচ্ছে।
জনাবমোঃ জামাল উদ্দীন আহমেদ, জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর গত ০৫ মার্চ, ২০১০ তারিখেমেহেরপুর সার্কিট হাউজ রোডে মেহেরপুর ডায়াবেটিস হাসপাতাল স্থাপন করেন।ডায়াবেটিস রোগীদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় ক্যাম্পিং করাহচ্ছে।
জেলা প্রশাসক ফাউন্ডেশনঃ
অক্টোবর, ২০১১ থেকে জুলাই ২০১২ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক ফাউন্ডেশন, মেহেরপুরের কার্যক্রমঃগত ০৫.১০.২০১১ তারিখে এ জেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রের ব্যপ্তি ও প্রসারে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পদক/পুরস্কার প্রদান, মেধাবী/দরিদ্রদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, যৌতুক, বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং রোধে রচনা ও মেধা বিকাশ প্রতিযোগিতার আয়োজন ইত্যাদি লক্ষ্যকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর সাহান আরা বানুর উদ্যোগে জেলা প্রশাসক ফাউন্ডেশন-এর যাত্রা শুরু হয়েছে। ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরুর প্রথম প্রহরে খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(রাজস্ব), জনাব মোঃ সেরাজুল ইসলাম, প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে ফাউন্ডেশনের পথ চলার শুভ উদ্বোধন করেন। এ জেলার পাঁচ জন দরিদ্র প্রতিবন্ধীর মাঝে হুহুল চেয়ার বিতরণ, মেহেরপুর জেলা কারাগারের মহিলা ওয়ার্ডসহ তিনটি ওয়ার্ড রঙিন টেলিভিশন প্রদান এবং এক জন মৃত কর্মচারীর সন্তানকে শিক্ষাবত্তি প্রদানের মধ্য দিয়ে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম র্শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য এ জেলায় জনাব মোঃ নূরুন নবী তালুকদার, জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর এর সুযোগ্য নেতৃত্বে ২০০৫ সালে মেহেরপুরে ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করলেও একই নামে একটি এনজিও এ জেলায় কাজ করছে। এতদসংক্রান্তে মেহেরপুর ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম জেলা প্রশাসক ফাউন্ডেশনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
১। দরিদ্র মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান
২। প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ
৩। অনাথ আশ্রম শিশুদের ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ
৪। কারাগারে আটকবন্দীদের মাঝে চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাউপকরণ, ক্রীড়া সামগ্রী ও ০৫ টি টেলিভিশন প্রদান
৫। প্রান্তিক অঞ্চলের বিদ্যালয়ের শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
৬। জেএসসি/জেডিসি ও পিএসসি জিপি-৫ প্রাপ্ত ছাত্র/ছাত্রীদের সম্মাননা প্রদান
৭। এসএসসি২০১২ এ জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা প্রদান
৮। হতদরিদ্রদের জন্য আর্থিক সহায়তা
৯। কর্মজীবী শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ
মেহেরপিডিয়াঃ
জনার মোঃ জিয়াউর রহমান খান, জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর ২০০৮ সনে "মেহেরপিডিয়া’’ নামক একটি তথ্যচিত্র তৈরী করেন। উক্ত তথ্যচিত্রে সিডি আকারে মেহেরপুর জেলার ইতিহাস/ঐতিহ্য/প্রকৃতি/সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
মুজিবনগর উপজেলা প্রতিষ্ঠা এবং মুজিবনগর কমপ্লেক্সঃ
১৯৯৭ সালে মেহেরপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ সামসুল হক মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত মেহেরপুরের মুজিবনগরের স্মৃতি রক্ষার্থে মুজিবনগরকে উপজেলা ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরার লক্ষে এখানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রসহ অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিকট প্রস্তাব প্রেরণ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার মেহেরপুর সদর উপজেলার ০৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে মুজিবনগরকে উপজেলা ঘোষণা করেন। ২০০০ সালের ২৪ ফেব্ব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে মুজিবনগর উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন সরকার মুজিবনগরে মুজিবনগর কমপ্লেক্সে-এর মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরসমূহ চিহ্নিতকরণ বাংলাদেশের মানচিত্র, ঐতিহাসিক ০৬ দফাভিত্তিক ০৬ উদ্যানের গোলাপবাগান, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, পর্যটন মোটেল ইত্যাদি প্রকল্প গ্রহণ করেন। মুজিবনগরে গৃহীত সরকারের এ সকল উন্নয়ন কর্মসূচি বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন আছে।
স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন এবং ধূমপানবিরোধী অভিযানঃ
১৯৯৪ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ ইসহাক আলী জেলার প্রতিটি পরিবারে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং ধূমপানরোধে কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষে ব্যাপক প্রচারণার ফলে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারে সে সময় জেলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়। তবে ধূমপানবিরোধী কার্যক্রমে তেমন পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি।
ওয়েব সাইট স্থাপনঃ
তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছানো এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েরweb portalচালু করা হয়েছে। এই web portal এ জেলার বিভিন্ন দপ্তর/বিভাগের উন্নয়নমূলক তথ্য প্রদান করা হয়ে থাকে। web portal এর ঠিকানাঃ www.meherpur.gov.bd
হেল্প ডেস্কঃ
সরকারি সেবা আরো দ্রুত ও সহজতর করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। এই ডেস্ক থেকে জনগণ ভূমি রেকর্ড, বিভিন্ন দপ্তরের তথ্য, পাসপোর্টের আবেদন দাখিল ও পাসপোর্ট গ্রহণ এবং অভিযোগ দাখিলসহ বিভিন্ন সেবা পাচ্ছেন।
অক্টোবর, ২০১১ থেকে জুলাই ২০১২ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক ফাউন্ডেশন, মেহেরপুরের কার্যক্রমঃগত ০৫.১০.২০১১ তারিখে এ জেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রের ব্যপ্তি ও প্রসারে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পদক/পুরস্কার প্রদান, মেধাবী/দরিদ্রদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, যৌতুক, বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং রোধে রচনা ও মেধা বিকাশ প্রতিযোগিতার আয়োজন ইত্যাদি লক্ষ্যকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর সাহান আরা বানুর উদ্যোগে জেলা প্রশাসক ফাউন্ডেশন-এর যাত্রা শুরু হয়েছে। ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরুর প্রথম প্রহরে খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(রাজস্ব), জনাব মোঃ সেরাজুল ইসলাম, প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে ফাউন্ডেশনের পথ চলার শুভ উদ্বোধন করেন। এ জেলার পাঁচ জন দরিদ্র প্রতিবন্ধীর মাঝে হুহুল চেয়ার বিতরণ, মেহেরপুর জেলা কারাগারের মহিলা ওয়ার্ডসহ তিনটি ওয়ার্ড রঙিন টেলিভিশন প্রদান এবং এক জন মৃত কর্মচারীর সন্তানকে শিক্ষাবত্তি প্রদানের মধ্য দিয়ে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম র্শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য এ জেলায় জনাব মোঃ নূরুন নবী তালুকদার, জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর এর সুযোগ্য নেতৃত্বে ২০০৫ সালে মেহেরপুরে ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করলেও একই নামে একটি এনজিও এ জেলায় কাজ করছে। এতদসংক্রান্তে মেহেরপুর ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম জেলা প্রশাসক ফাউন্ডেশনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
১। দরিদ্র মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান
২। প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ
৩। অনাথ আশ্রম শিশুদের ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ
৪। কারাগারে আটকবন্দীদের মাঝে চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাউপকরণ, ক্রীড়া সামগ্রী ও ০৫ টি টেলিভিশন প্রদান
৫। প্রান্তিক অঞ্চলের বিদ্যালয়ের শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
৬। জেএসসি/জেডিসি ও পিএসসি জিপি-৫ প্রাপ্ত ছাত্র/ছাত্রীদের সম্মাননা প্রদান
৭। এসএসসি২০১২ এ জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা প্রদান
৮। হতদরিদ্রদের জন্য আর্থিক সহায়তা
৯। কর্মজীবী শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ
মেহেরপিডিয়াঃ
জনার মোঃ জিয়াউর রহমান খান, জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর ২০০৮ সনে "মেহেরপিডিয়া’’ নামক একটি তথ্যচিত্র তৈরী করেন। উক্ত তথ্যচিত্রে সিডি আকারে মেহেরপুর জেলার ইতিহাস/ঐতিহ্য/প্রকৃতি/সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
মুজিবনগর উপজেলা প্রতিষ্ঠা এবং মুজিবনগর কমপ্লেক্সঃ
১৯৯৭ সালে মেহেরপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ সামসুল হক মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত মেহেরপুরের মুজিবনগরের স্মৃতি রক্ষার্থে মুজিবনগরকে উপজেলা ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরার লক্ষে এখানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রসহ অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিকট প্রস্তাব প্রেরণ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার মেহেরপুর সদর উপজেলার ০৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে মুজিবনগরকে উপজেলা ঘোষণা করেন। ২০০০ সালের ২৪ ফেব্ব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে মুজিবনগর উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন সরকার মুজিবনগরে মুজিবনগর কমপ্লেক্সে-এর মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরসমূহ চিহ্নিতকরণ বাংলাদেশের মানচিত্র, ঐতিহাসিক ০৬ দফাভিত্তিক ০৬ উদ্যানের গোলাপবাগান, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, পর্যটন মোটেল ইত্যাদি প্রকল্প গ্রহণ করেন। মুজিবনগরে গৃহীত সরকারের এ সকল উন্নয়ন কর্মসূচি বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন আছে।
স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন এবং ধূমপানবিরোধী অভিযানঃ
১৯৯৪ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ ইসহাক আলী জেলার প্রতিটি পরিবারে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং ধূমপানরোধে কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষে ব্যাপক প্রচারণার ফলে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারে সে সময় জেলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়। তবে ধূমপানবিরোধী কার্যক্রমে তেমন পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি।
ওয়েব সাইট স্থাপনঃ
তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছানো এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েরweb portalচালু করা হয়েছে। এই web portal এ জেলার বিভিন্ন দপ্তর/বিভাগের উন্নয়নমূলক তথ্য প্রদান করা হয়ে থাকে। web portal এর ঠিকানাঃ www.meherpur.gov.bd
হেল্প ডেস্কঃ
সরকারি সেবা আরো দ্রুত ও সহজতর করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। এই ডেস্ক থেকে জনগণ ভূমি রেকর্ড, বিভিন্ন দপ্তরের তথ্য, পাসপোর্টের আবেদন দাখিল ও পাসপোর্ট গ্রহণ এবং অভিযোগ দাখিলসহ বিভিন্ন সেবা পাচ্ছেন।
Labels:recent
recent
recent
12:08 PM
জেলার ঐতিহ্য
১৯৪৭- এ দ্বিখন্ডিত হয় বাংলা ভাষার ভূখন্ড, দ্বিখন্ডিত হয় চৈত্য-লালনের নদীয়া; বিভক্ত হয় মেহেরপুর। রাজনীতি সব পারে; সব পেরেছে-চিরবন্ধুদের মধ্যে এনে দিতে পারে যুদ্ধের তান্ডব, শক্রদের মাঝে আনতে পারে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির মিলনোৎসব। এই রাজনীতিই ১৯০৫ সালে হাজার বছরের বাঙালাকে দ্বিখন্ডিত করেছে; আবার এই রাজনীতিই ১৯১১ সালে দ্বিখন্ডিত বাঙলাকে এক ও ঐক্যবদ্ধ করেছে। রাজনীতি কেবল ভূখন্ডকেই যুক্ত ও বিভক্ত করেনা; যুক্ত ও বিভক্ত করে ভাষা-শিল্প-সাহিত্য-রাষ্ট্র-সমাজ-সভ্যতাকে। সাতচল্লিশের দ্বিখন্ডন দুভাগে ভাগ করে দেয় মেহেরপুর এবং তার কয়েকশত বছরের দীর্ঘ ঐতিহ্যের গৌরবময় স্রোতকে। এই দু’স্রোত ভাগ করে দেয় মেহেরপুরকে এবং তার কয়েকশত বছরের দীর্ঘ ঐতিহ্যের গৌরবময় স্রোতকে। এই দু’স্রোত ভাগ হেয় ঢোকে দুদিকেঃ মৃদু ক্ষীণ স্রোতটি প্রবেশ করে পশ্চিমবঙ্গে আর পূর্ব বাঙলায় প্রবেশ করে ব্যাপক বিস্তৃত তরঙ্গসংকুল স্রোতটি। সাতচল্লিশের দ্বিখন্ডন এর বিভক্তি আমাদেরকে মেহেরপুরের অখন্ড ইতিহাস আবিষ্কার করতে দেয়নি; যা দিয়েছে তা কেবল খন্ডতার ইতিহাস। আর এই খন্ডতার কখনোই সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। অথচ এই বৈশিষ্ট্যমন্ডিত জনপদের শুধু রাজনীতি নিয়ে নয়; শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, স্থাপত্য, পুরাকীর্তি, ধর্ম, দর্শন নিয়ে রচিত হতে পারতো এক এক অন্যন্য ঐতিহাসিক উপাখ্যান। কারণ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের উজ্জ্বল অর্ভ্যূদয়ের মুহুর্তেই মেহেরপুর গৌরবময় ও সাহসী ভূমিকা পালন করেনি; এর রয়েছে কয়েকশত বছরের দীর্ঘ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, স্থাপত্য, পুরাকীর্তি, ধর্ম, দর্শন এর আলোকিত ইতিহাস। ভরতচন্দ্রের ‘অন্নদা মঙ্গল’ কবি হরিঠাকুরের গান, ডঃ ইরফান হাবিবের ইতিহাস, যোগেন্দ্রনাথ ভাউাচার্যের ‘ঐরহ ফঁ ঈধংঃবং ধহফ ঝবপঃ’ গ্রন্থ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পূর্ব পশ্চিম’ উপন্যাসে মেহেরপুরের গৌরবময় ঐতিহ্যের উল্লেখ রয়েছে।
নামকরণের শেকড় সন্ধানে মেহেরপুর
মেহের এক প্রাচীন জনপদের নাম। ইতিহাসের কোন সোনালী অতীতে এখানে জনবসতি গড়ে ওঠে তা জানা যায় না। তবে জনশ্র“তি আছে, রাজা বিক্রমাদিত্যের আমলে এখানে জনপদ গড়ে ওঠে। কিন্তু এ সম্পর্কে কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। কুমুদনাথ মল্লিক এর নদীয়া কাহিনী তে মেহেরপুরকে বিখ্যাত রচনাকার মিহির ও খনার বাসস্থান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মিহিরের নাম থেকেই মিহিরপুর পরবর্তীতে অপভ্রংশ মেহেরপুর নামের উদ্ভব হয়েছে।
অবশ্য নামকরণ সম্পর্কিত এ তথ্যটি সম্পূর্নরুপে জনশ্র“তি ও অনুমান নির্ভর। ড. আশরাফ সিদ্দিকী অবশ্য ইধহমষধফবংয উরংঃৎপঃ এধুবঃঃবৎং কঁংযরঃধ গ্রন্থে ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি বলেনঃ ঞযব ঃড়হি ধিং ভড়ঁহফবফ রহ ঃযব ১৬ঃয পবহঃঁৎু নু ধ ফধৎারংয হধসবফ গবযবৎ অষর ঝযধয ধভঃবৎ ডযড়স ঃযব ঃড়হি ধিং হধসবফ দরবেশ মেহের আলী কবে কোথা থেকে এ জনপদে এসেছিলেন তারও সঠিক তথ্য প্রমানদি পায়া যায় না। দরবেশ মেহের আলীর নামানুসারে যে মেহেরপুরের নাম করণ করা হয়েছে তারও কোন ঐতিহাসিক সত্যতা খুঁজে যাওয়া যায় না। তবে মেহের আলীর নামেই মেহেরপুরের নামকরণ হয়েছে তা স্থানীয় ইতিহাস চর্চায় বার বার উঠে এসেছে।
১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় মেহেরপুরকে মহকুমা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। নদীয়া জেলার অন্তর্ভূক্ত এই মহকুমা চারটি থানা- করিমপুর, তেহট্ট, গাংনী, এবং মেহেরপুর নিয়ে গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে র্যাডক্লিফ রোয়েদাদ এর ভিত্তিতে মেহেরপুরকে ভেঙ্গে দু টুকরো করা হয়। শুরু হয় মেহেরপুরের নতুন ইতিহাস, তৈরী হয় নতুন ভুগোল। ১৯৮৪ সালে ২৪ ফের্রুয়ারি মেহেরপুর জেলার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
মেহেরপুর লড়াই সংগ্রামের বাতিঘর
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ কোন আকম্মিক ঘটনার ফলশ্র“তি নয়। ইতিহাস এক অনিবার্য পরিনতিতেই আসে একাত্তরের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। কত লড়াই সংগ্রামের অগ্নিঝরা দিন পেরিয়েই এসেছে একাত্তর। তীতুমীরের বাঁশের কেল্লা সুর্যসেনের চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, ইলামিত্রের নাচোলের তেভাগা আন্দোলনের সুদীর্ঘ রক্তাক্ত পথ পেরিয়ে বাঙালি মুজিবনগর পৌছায়; অবশেষে বজ্রশপথ ও অগ্নিঝরা লড়াই এর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় হাজার বছরে স্বপ্নলালিত স্বাধীন বাংলাদেশ। বাঙালির সকল সংগ্রাম ও আন্দোলন মেহেরপুরের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। ফকির মজনু শাহ, চেরাগ আলী শাহ্ ভবানী পাঠক দেবী চৌধুরানীদের নেতৃত্ব পরিচালিত ফকির সন্ন্যাসী (১৭৬০-১৮০০) মেহেরপুরের গাংনীর ইন্দুভুষন সন্ন্যাসীর গড়ে তোলে প্রতিরোধ সংগ্রাম। নীল বিদ্রোহের আগুনও জ্বলেছিল মেহেরপুরে। নদীয়া জেলার চৌগাছা, চুয়াডাঙ্গার শালঘর মধুয়ায় নীল বিদ্রোহের সূচনা হলে মেহেরপুরের কৃষকরাও সে বিদ্রোহে অংশ গ্রহণ করে এবং গড়ে তোলে প্রবল আন্দোলন। নীলকরদের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ সংগ্রামে নেতৃত্বে দেন স্থানীয় জমিদার মথুরানাথ মুখোপাধ্যায় ও নবকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়। নাটুদহের জমিদার নফর পাল চৌধুরী, স্থানীয় কৃষক ওসমান মন্ডল, গোলাম রব্বানী ও মীর আহম্মদের রয়েছে নীল বিদ্রোহ অসামান্য ভূমিকা। অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিকাশ ও রাজনীতিকে গনমুখী করার ক্ষেত্রেও মেহেরপুর পালন করে উজ্জ্বলতর ভূমিকা। কংগ্রেস নেতা বল্লভপুরের আশুতোষ উকিল, দারিয়াপুরের প্রমথনাথ বিশ্বাস, গাড়াডোবের মনি স্যান্যাল, কমিউনিষ্ট নেতা মাধব মোহন্ত এবং মুসলিম লীগ নেতা আ্যাডভোকেট আবদুল হান্নান এর রয়েছে এক্ষেত্রে অসামান্য অবদান। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, উনসত্তরের গনঅভ্যুথান, সত্তরের সাধারণ নির্বাচনেও এ জনপদের মানুষ পালন করে অনন্য ভূমিকা। একাত্তরে মেহেরপুর ছিল সাড়ে সাত কোটি মুক্তিকামী মানুষের কাছে বাতিঘর।
ধর্ম দর্শন চর্চায় মেহেরপুর
এয়োদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে লক্ষণ সেনের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে নবদ্বীপে হিন্দু রাজত্বের অবসান হয়েছিল। পঞ্চাদশ শতকের শেষ দিকে এই নবদ্বীপের নববৈষ্ণব ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাব। তিনি মানুষকে দেখিয়েছিলেন মুক্তির পথ, বলেছিলেন মানুষে মানুষে কোন ভেদ নেই। চৈতন্য প্রবর্তিত বৈষ্ণবধর্মের প্রভাবে আঠারো শতকের শেষে মেহেরপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় গৌন লোক ধর্ম বলরামী সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ে প্রাণপুরুষ ছিলেন বলরাম হাড়ি। এই ধর্মের অনুসারীরা অধিকাংশই ছিলেন হাড়ি ডোম বাগদী মুচি নমঃ শুদ্র ও মুসলমান। হিন্দু ভক্তের কাছে তিনি ছিলেন হাড়িরাম মুসলামান ভক্তের হাড়িআল্লাহ। হাড়িয়াল বা বলরাম তত্ত্ব তার গানে কোন বলরামের আমি চেলা শব্দের লক্ষ্য হাড়ি সম্প্রদায়। বলরামের শিষ্যরা গঙ্গাঁজলের মহিমা কিংবা সংস্কৃত মন্ত্রের পবিত্রতা মানবেত না। বলরাম হাড়ি মুক্ত চিন্তার মানব হিসেবে সারা জীবন সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে গেছেন। মরমী সাধক লালন শাহের সমসামরিক বলরাম হাড়ি দেব-দেউল, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম. ধর্মীয় বিধি বিধানকে অস্বীকার করে গানে গানে এক পরম ব্রহ্মের সন্ধান করেছেন। সহজিয়াদের মতে তিনিও রূপের মধ্যে অরূপকে, দেহ দেউলেই দেহাতীতকে পেতে চেয়েছেন। তিনি মনে করতেন আনুষ্ঠানিক ধর্ম, জাতপাত, বর্ণাশ্রম প্রথা পরম ব্রহ্মকে পাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। মদন বাউলের মত তিনিও সহজ প্রেমের ধারায় স্নাত হয়ে গেয়েছেন ঃ
তোমার পথ ঢাইক্যাছে মন্দিরে মসজিদে।
তোমার ডাক শুনি সাঁই চলতে না পাই, রুখে দাঁড়ায় গুরুতে মুরুশিদে।
মেহেরপুর বাংলাদেশের একমাত্র জেলা যেখানে হিন্দুর চেয়ে খৃষ্টানের সংখ্যা বেশী। উনিশ শতকের তিন দশকের শেষের দিকে মিশনারীরা খৃস্টধর্মের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্য মেহেরপুর অঞ্চলে আসেন। খৃষ্টধর্মের মানবকল্যাণমূলক কর্মকান্ড, সাম্য-মৈত্রীর বাণী নিম্নবর্গীয় হিন্দু মুসলমানদের আকৃষ্ট করে এবং ভবরপাড়া, রতনপুর, বল্লভপুর, নিত্যনন্দপুর; জুগিন্দা, পাকুড়িয়ার মানুষ দলে দলে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে। উনিশ শতকের মুসলিম পুনর্জাগরণের অগ্রগন্য পুরুষ ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক মুন্সী জমিরুদ্দীন এক সময় (২৫ডিসেম্বর ১৮৮৭) খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত হন। পরবর্তীতে তিনি ইসলাম ধর্মে ফিরে আসেন। সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, ইসলাম ধর্ম প্রচারক যশোরের মুন্সী মেহেরউ্ল্লাহ, মোজাম্মেল হক, আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ প্রমুখের সাথে তাঁর ছিল আন্তরিক সখ্যতা। মুন্সী জমিরুদ্দীন কেবল খৃষ্ট ও ইসলাম ধর্মের পন্ডিত ছিলেন না; ব্রাহ্ম ধর্ম সম্পর্কে ও তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। হিন্দু ধর্মের মহান সংস্কারক নিগমানন্দ সরস্বতীর জন্ম ১২৮৭ বঙ্গাব্দে রাধাগোবিন্দপুর গ্রামে। তার পৈতৃক নিবাস মেহেরপুরের কুতুবপুর গ্রামে। শ্রী চৈতন্য ও শংকরের দর্শনের সমম্বয়ে এক নতুন ধর্মমত প্রতিষ্ঠা করেন। স্বামী নিগমানন্দ গৃহী হয়েও ছিলেন সন্ন্যাসী আশ্রমিক মর্ত্য ও মানবের প্রেমে ব্যাকুল এক সত্ত্বিক পুরুষ তিনি বলেন সংসার আশ্রম কঠোর এবং ভীষণতর জানি তথাপি সংসার আশ্রম জীবের উন্নতির সোপান। ক্রোধের বসে দুঃখে বা অভিমানে কাপুরুষের ন্যায় সংসার ত্যাগ সন্ন্যাসের সাধনা নং স্বার্থ সাধনের নামান্তর। নিগমানন্দের ধর্ম দর্শন ও আধ্যাত্মিক ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে তার জ্ঞানীগুরু (১৩১৫) প্রেমিক গুরু ও তান্ত্রিকগুরু (১৩১৮) যোগী গুরু (১৩১২) প্রভৃতি গ্রন্থে।
ইসলাম ধর্মের প্রসার ও পুনর্জাগরণের রয়েছে মেহেরপুরের দরবেশ ও সাধকদের অগ্রনী ভূমিকা। উনবিংশ শতাব্দীর মুসলিম পুনর্জাগরনের প্রাণ পুরুষ ছিলেন মেহেরপুরের মুন্সী জমিরুদ্দীন। এ দেশের মুসলমানরা যখন ইতিহাস ঐতিহ্য বিস্মৃত অর্থনৈতিক ভাবে দারিদ্র ক্লিষ্ট তখন খৃষ্টান মিশনারীরা তাদেরকে নানাভাবে বিপথগামী করতে চেয়েছিল। মুন্সী জমিরুদ্দীন বক্তৃতা ও লেখালেখির মাধ্যমে মুসলমানদের বিপথগামিতা ও ধর্মান্তরকরণের পথ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন।
শিল্প সাহিত্য সাংস্কৃতি চর্চায় মেহেরপুর
জ্ঞান দর্শন পন্ডিতের শাস্ত্র চর্চা শিল্প সাহিত্য চর্চার পীঠস্থান নদীয়া। অখন্ড নদীয়ার মহকুমা হিসেবে মেহেরপুরের রয়েছে শিল্প সাহিত্যের গৌরবময় ও আলোকিত অতীত। কবি কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী, বৈষ্ণব পদকর্তা জগদীশ্বর গুপ্ত, কবি রমনীমোহন মল্লিক, দীনেন্দ্র কুমার রায় (১৮৫৯-১৯৪৩), আব্দুল হামিদ, কাব্য বিনোদন উজীউদ্দিন আহমদ, মুহাম্মদ আব্দুল আজীজ সাহিত্যিক,মুন্সী জমিরুদ্দীন রেয়াজউদ্দীন আহমদ প্রমুখের মত সাহিত্যিক মেহেরপুরে জন্মগ্রহণ এবং একানেই সাহিত্য চর্চা করেছেন। এদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন রমনীমোহন মল্লিক ও দীনেন্দ্র কুমার রায়। রমনীমোহন মল্লিক মেহেরপুরের বিখ্যাত মল্লিক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বৈষ্ণব সাহিত্য পন্ডিত, দীনেন্দ্র রায় ছিলেন সাংবাদিক ও লেখক এবং কলকাতার বসুমতি (১৯০০) পত্রিকার সহ সম্পাদক। কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের গ্রামবার্তা প্রকাশনার তিনি নিয়মিত লেখক ছিলেন। তার লেখা পল্লীচিত্র, পল্লীকথা, পল্লীবধূ, পল্লী বৈচিত্র গ্রন্থগুলিতে মেহেরপুর অঞ্চলের মানুষের সমাজ জীবন সংস্কৃতির গভীর ছাপ রয়েছে। জগদীশ্বর গুপ্ত, মুন্সী জমিরুদ্দীন, রেয়াজউদ্দীন আহম্দ প্রমুখের সাহিত্য ছিল ধর্ম কেন্দ্রিক, শিল্প সৃষ্টির জন্য নয় বরং ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্যই তারা সাহিত্য চর্চা করেছেন। মুন্সী জমিরুদ্দীনের সাহিত্যে ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্য শিক্ষা সংস্কৃতি বীরত্ব গাঁথা স্থান পেয়েছে। তার কবিতা গজল অনুবাদ সাহিত্য ধর্ম বিষয়ক প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। এষড়ৎু ড়ভ রংষধস (১৯২৯) মেহের চরিত (১৩১৫) শোকানল (১৩১৬) কোথা চলি গেলে (১৩০৮) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ১৯ শতকের মুসলিম পুনর্জাগরণের এই অগ্রগন্য মনীষির ছিল প্রখর কাব্য জ্ঞান। নিগমানন্দ সরস্বতী (১৮৮০-১৩৩৭) ধর্ম ও দর্শন চর্চার পাশাপাশি কখনও কখনও সাহিত্য চর্চা করেছেন। সুধাংশুবালা তার বিখ্যাত আত্মজৈবনিক উপন্যাস।
প্রকশনা শিল্পের উন্মেষকাল সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশনার ক্ষেত্রে মেহেরপুরের দারিয়পুর গ্রাম থেকে নদীয়া সাহিত্য সম্মিলনী, মুখপাত্র হিসেবে সতীশচন্দ্র বিশ্বাসের সম্পাদনায় শিল্প সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা সাধক প্রকাশিত হয়। মেহেরপুরে শিল্প সংস্কৃতি সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে অগ্রগন্য ভূমিকা রেখে চলেছে ভৈরব সাংস্কৃতিক চত্বর এর মুখপাত্র স্রোত (১৯৭৮)।
মেহেরপুরের কবিগান ও ভাবরসের অমৃতকথা ঃ
বাঙলা সাহিত্য ইতিহাস (১৭৬০-১৮৩০) কবিগান ও পালাগানকে বলা হয় ‘দ্বিতীয় অন্ধকারের পদাবলী’। এ অধ্যায়ে বাঙালীর জীবনে নেমে আসে অবক্ষয় আর ভ্রষ্টতার গভীর অন্ধকার। আর এ অন্ধকারের যুগে কবিয়ালরা অযংযত ভাবালুতা, খিস্তি খেউড়, শ্লীল-অশ্লীল ভাবরস পরিবেশনের মাধ্যমে যে সাহিত্যধারা সৃষ্টি করেন তা কবিগান নামে পরিচিত। কবিগান সাঙ্গিতিক কুশলতা ও নৈপুন্য দেখিয়ে যাঁরা খ্যাতি অর্জন করেন তাঁদের মধ্যে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, ভোলা ময়রা, কেষ্টমুচি, হরিঠাকুর অন্যতম। বাঙলা সাহিত্যের সে যুগকে কবিয়াল ও পালাকারদের যুগ বলা হয়। যেযুগে মেহেরপুর অঞ্চলে অসংখ্য কবিয়াল ও পালাকারদের আর্বিভাব হয় যারা আসরে আসরে গান গেয়ে বেড়াতো। এদের গানের খাতা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়নি; করা হলে মেহেরপুরের লোক সাহিত্যের ভান্ডার সমৃদ্ধ হতো। মেহেরপুর পালাগান ও কবিগানকে করার ক্ষেত্রে যে সকল চারণ কবি ও গায়েন অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছেন তাঁরা হলেনঃ গোফুর মুন্সী (১৮৮১-১৯৪০), ওলিদাদ মুন্সী (১৯০৪-১৯৮৬), আকালী বিশ্বাস (১২৯০-১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), রামেশ্বর দাস (১২০৫-১৩০০ বঙ্গাব্দ), দায়েম বিশ্বাস (১৩০৪-১৩৯৪) প্রমুখ। এদের মধ্যে সুগায়ক ছিলেন আকালী বিশ্বাস, ওলিদাদ মুন্সী ও দায়েম বিশ্বাস। এ কবিয়াল ও পালাকারদের গান আজও মেহেরপুরের গ্রামে-গঞ্জে মুখে মুখে ফেরে।
মেহেরপুর স্থাপত্য শিল্প ও পুরাকীতিঃ
মেহেরপুর জেলায় হিন্দু বৌদ্ধযুগের প্রতœনির্দশন না থাকলেও জেলায় বিভিন্ন স্থানে পাল-সেন যুগের প্রতœনিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেছে। মেহেরপুর শহর থেকে ৮ কিঃমি দক্ষিণে আমদহ গ্রামের স্থাপত্য কীর্তির ধ্বংস বিশেষ হিন্দুরা বৌদ্ধযুগের বলে বাঙলাদেশের প্রতœসম্পদ গ্রন্থের লেখক আবুল কালাম মোঃ জাকারিয়া মনে করেন। প্রায় এক বর্গ কিঃ মিঃ আয়তনের এই প্রতœস্থানের চারিদিকে এক সময় পরিখা ছিল। কিন্তু পরিখার বেস্টনীতে কোন প্রাচীর ছিল না। আমদহের এই স্থাপত্যকীর্তি ধ্বংসাবিশেষকে গোয়লা চৌধুরীদের সাথে বর্গী দস্যুদের যুদ্ধেধ্বংস প্রাপ্ত বাসগৃহ বলে মাসিক পত্রিকা সাধক এর ১৩২০ (১ম বর্ষ ১ম সংখ্যা) সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামে নদীয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদার ১৬০৬-১৬০৭ সালে সাতটি শিবমন্দির ও তার কাছেই রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। ১৭২৮ সালে প্রকাশিত ক্ষিতীশ বংশাবলি চরিতং পুঁথিতে মন্দিরটি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। বল্লভপুর গ্রামের মধ্য পাড়া একবিষা পরিমাণ অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির উপর সাতটি শিবমন্দির ছিল। এই মন্দিরটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। জঙ্গলাকীর্ণ এই স্থানটি এখন পোড়ামাটির টালি ইটে পরিপূর্ণ। এক সময়এর চারিদিকে প্রাচীর ছিল; কিন্তু এখন তা আর নেই। আবুল কালাম যাকারিয়া’র বাংলাদেশের প্রতœ সম্পদ গ্রন্থে বলা হয়েছে। মন্দিরটি এমনভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে যে, এর আকার ও আয়তন সঠিকভাবে নির্ধারণ করা কঠিন। তবে ধারনা করা হয় বর্গাকৃতি এ মন্দিরের আয়তন ছিল ১৬ ফুট দ্ধ ১৬ ফুট। এর চারিদিকে ছিল বারান্দা’। শ. ম. শওকত আলী কুষ্টিয়ার ইতিহাস গ্রন্থে বলেছেনঃ বল্লভপুর মন্দির নানা আকারে টেরাকোটা ইট দ্বারা তৈরী। অধিকাংশ ইটে সিংহ; বাঘ; হাতি; প্রভৃতি জীব জন্তু এবং পদ্ম নৃত্যরতা যুবতী প্রভৃতি চিত্র অংকিত। প্রতœতত্ববিদ ও ইতিহাসবেত্তারা বল্লভপুরের এ মন্দিরকে শিবমন্দির হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা মনে করেন;এটি বৌদ্ধ মন্দির কিংবা নাথ যোগি সম্প্রদায়ের উপাসনালয় নয়; এটি ছিল হিন্দু শিবমন্দির। ক্রিশ্চিয়ান অধ্যুষিত বল্লভপুর গ্রামে একটি গীর্জা রয়েছে এ গীর্জাটি ১৮৩২ সালে জার্মান ধর্মযাজক জিগিং জিনস্কি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। গীজার সামনে সমাহিত করা হয় মিসনের পাদরী হেনরী উইলিয়াম কে। সমাধি এপিটাফে লেখা আছে ওহ ঃযব সবসড়ৎু ড়ভ ঐবহৎু ডরষষরধসং/অ ঝবৎাধহঃ ড়ভ লবংঁং পযৎরংঃ/ ধহফ নৎড়ঃযবৎ ড়ভ ঃযব.
কবি ভারতচন্দ্র রন্তনাকর অন্নদামঙ্গলে লিখেছেনঃ
ধন্য ধন্য পরগনা বাগোয়ান গ্রাম
গাঙ্গিনীর পুর্বেকুলে আন্দুলিয়া গ্রাম
তাহার পশ্চিম পারে বড় গাছি গ্রাম
যাহে অন্নদার দাস হরিহোর নাম।
এই গ্রামে দরবেশ জাহান আলী সমসময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় শেখ ফরিদের দরগাহ। এ ছাড়া রয়েছে জমিদার হরেকৃষ্ণ সামাদার নির্র্মিত আটচলা ও পোড়ামাটির ভাস্কর্য মন্ডিত মন্দির। মন্দিরটি সম্পর্কে ড. ইরফান হাবিব ুাঁর ধহ ধঃষধং ড়ভ সঁমযধষ বসঢ়রৎব; ঢ়ড়ষরঃরপধষ ধহফ বপড়হসরপ সধঢ়ধ রিঃয ফবঃধরষবফ হড়ঃবং, নরনষরড়মৎধঢ়যু ধহফ রহফবী. গ্রন্থে অনেক তথ্য প্রদান করেছে।
মেহেরপুর শহরের মালোপাড়ায় ভৈবর নদীর তীরে বলরাম হাড়ি প্রবর্তিত লৌকিক গৌর্ম বলরামি সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে লালন শাহের সমসাময়িক এই লৌকিক ধর্মের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। এই ধর্মের প্রাণ পুরুষ অন্ত্যজ নেতা বলরাম হাড়ির ভাবাদর্শে উদ্ধুদ্ধ হয়ে বিপুল সংখ্যক অন্ত্যজ, ব্রাত্য-মন্ত্রহীন মানুষ দীক্ষা গ্রহণ করেন। যোগেন্দ্রনাথ ভট্টাযার্যের ‘ঐরহফঁ ঈধংঃষবং ধহফ ঝবপঃং’(১৮৯৬খ্রিঃ) গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, বলরামী সম্প্রদায়ের অনুসারীদের সংখ্যা বিশ হাজার। ১২৫৭ বঙ্গাব্দের ৩১ শে অগ্রহায়ণ তিরোধানের পর বলরামের তার মালোপাড়ার আখড়ায় সমাহিত করা হয় এবং ৩৫ শতক জমির উপর নির্মাণ করা হয় অংকরণহীন আটচালা সমাধিমন্দির। সিমেন্ট দ্বারা নির্মিত বগাকৃতির (১৫ফুট ী ১৫ফুট) এই মন্দিরের গর্ভগৃহের আয়তন ৮ফুট ী ৮ফুট। এই মন্দির প্রাঙ্গনে বারুণী তিথিতে প্রতিবছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও মেহেরপুর শহরে রয়েছে রাজা গোয়ালা চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত ১৮ শতকের আটচালা শিবমন্দির। মন্দিরটি বর্তমানে নিগমানন্দ সরস্বতী ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত সারস্বত আশ্রম হিসেবে কাজ করছে।
পাল-সেন, মোঘল এবং ইংরেজ আমলে স্থানীয় ভূস্বামী, অমাত্যবর্গ, রাজকর্মচারী, ফকির দরবেশ এবং খৃষ্টান মিশনারীদের উদ্যোগে মেহেরপুরের গ্রামে গঞ্জে স্থাপত্যশিল্পের অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটে। স্টাইল, অলংকরণে এ অঞ্চলের মুসলিম স্থাপত্যের সাথে হিন্দু স্থাপত্য শিল্পের পার্থক্য রয়েছে বিস্তর, তথাপী মিল রয়েছে অনেক। মসজিদের সাথে মন্দিরের সাদৃশ্য এড়ানোর জন্য মন্দির নির্মাতার গম্বুজবর্জন করলেও বাংলা চালাঘরের স্টাইলকে বর্জন করেননি। মুসলিম ও হিন্দু স্থপতিরা বাংলা চালাঘরের আদলেই মসজিদ ও মন্দির নির্মাণ করেছেন। একারণে মেহেরপুর বাজারের শাহ ভালাইয়ের দ্বিতীয় দরগাহ এবং পুরাতন পোষ্ট অফিস পাড়ার মা বরকতের দরগাহকে কাঠামো ও আয়তনগত দিক দিয়ে মন্দির থেকে আলাদা কিছু ভাবা যায় না। বঙ্গীয় অলংকরণ ও স্টাইল হিন্দু স্থাপত্যের মত মুসলিম স্থাপত্যকেও প্রভাবিত করেছে। ইংরেজ আমলে নির্মিত বল্লভপুর চার্চ (১৮৪৭খ্রিঃ), ভবরপাড়া রোমান ক্যাথলিক চার্চ (১৯২৪ খ্রিঃ) এর নির্মাণশৈলীতেও পাশ্চ্যতারীতি অনুসরণ করা হয়নি। এতে দেশীয় স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করা হয়। তবে প্রযুক্তি ও স্টাইলে ইউরোপীয় স্থাপত্য শিল্পের প্রভাব ছিল। মরমি ভাবনায় মঙ্গল প্রদীপ ও মেহেরপুরঃ
নদীয়া আউল বাউল, ফকির-বৈষ্ণবদের দেশ। এই অঞ্চল মরমী সাধনার তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। পন্ডিতদের অভিমত বাউল মতাদর্শের উৎপত্তি এ অঞ্চলেই। বৃহত্তর নদীয়ার মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার বাউল-বৈষ্ণবদের সংখ্যা উল্লেখ করার মত। লালন শাহ, গগন শাহ, গগন হরকরা, গোঁসাই গোপাল এর সাধন ক্ষেত্র কুষ্টিয়া। আর চাঁদপতি, আরজান শাহ, আজাদ শাহ, আজমত শাহ, ঝড়– শাহ, গবীবুল্লাহ শাহ, কলিমুদ্দিন শাহ, আতাহার শাহ’র মত বাউল সাধকদের নিবাস ও সাধনক্ষেত্র হল মেহেরপুর। কুষ্টিয়া মেহেরপুর থেকেই বাউলের প্রেম ও ভক্তিময়তার বাণী পার্শ্ববতী জেলায় ছড়িয়ে পড়ে এবং হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বাউল মতবাদের বিকাশ ঘটে। আমাদের সংস্কৃতি ও জাতি সত্তার স্বরূপ এবং আতœপরিচয়ের সন্ধান পেতে লালন-হাসন-গগনদের যেমন চিনতে হবে তেমনি জানতে হবে মেহেরপুরের বাউল- বৈষ্ণবও পালাকারদের। কারণ শত শত বছর ধরে তারাই জ্বেলেছেন আমাদের শিল্প সংস্কৃতি ও ভাবুকতার সহস্র প্রদীপ।
মেহেরপুরকে আবিষ্কার করতে হলে অখন্ড নদীয়ার রাজনীতি, সমাজনীতি, প্রাচীন ইতিবৃত্ত শিল্প সাহিত্য চর্চা, ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কারণ নদীয়ার নবদ্বীপে সরস্বতীর সিংহাসন। এখানেই একদিন জ্বলেছিল ধর্ম, দর্শন, শিল্প, সাহিত্য ও জ্যেতিষশাস্ত্রের মঙ্গলপ্রদীপ, আর তা আলোকিত করেছিল মেহেরপুরকে। নবদ্বীপের সাথে মেহেরপুরের সস্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। নবদ্বীপ একদিন বাঙালীকে প্রেম ও ভক্তিরসে সিক্ত করেছিল আর একাত্তরে মেহেরপুরের মুজিবনগর, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত বাঙালীকে সংগঠিত করেছিল মেহেরপুরের শিল্প সাহিত্য ইতিহাস ঐতিহ্যের উৎস সন্ধান করতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে অখন্ড নদীয়ার গৌরবময় ইতিহাসের আলোকিত অধ্যায়ে। কারণ নদীয়ার সাথে মেহেরপুরের রয়েছে নাড়ীর সম্পর্ক।
আবদুল্লাহ আল-আমিন
তথ্যসূত্র : https://www.facebook.com/GreaterKushtiaNews
Labels:recent
recent
recent
11:54 AM
জেলার পটভূমি
ইতিহাসের স্বর্ণপাতা থেকে অনেক অনেক পূর্বেই হারিয়ে গেছে মেহেরপুর-এর নামকরণ সম্পর্কে যথার্থ তথ্যসমূহ। অনুমান, অনুধাবন অথবা বিশ্লেষণ এই নিয়েই এ বিষয়ে আত্নতৃপ্তি ছাড়া গত্যন্তর নেই । দীর্ঘকাল ধরে এ বিষয়ে ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে তবুও বিষয়টি তমাশাচ্ছন্ন রয়ে গেছে।
মেহেররপুর নামকরণ সম্পর্কে এ পযর্ন্ত দুটি অনুমানসিদ্ধ তথ্য পাওয়া গেছে। একটি হচ্ছে ইসলাম প্রচারক দরবেশ মেহের আলী নামীয় জনৈক ব্যক্তির নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ষোড়শ শতকের অথবা তার কিছুকাল ধরে মেহেরপুর নামকরণের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়ত বচনকার মিহির ও তার পুত্রবধূ খনা এই শহরে বাস করতেন বলে প্রচলিত আছে। মিহিরের নাম থেকে মিহিরপুর পরবর্তীতে তা অপভ্রংশ হয়ে মেহেরপুর নামের উৎপত্তি হয়েছে।
খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দীতে স্বনামধন্য ও খ্যাতিমান ভৌগালিক মিঃ টলেমির মানচিত্র গঙ্গা নদীর অববাহিকায় বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ পরিলক্ষিত হয়। এই ক্ষুদ্র দ্বীপাঞ্চলকে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর অঞ্চল বলে মনে করা হয়। গঙ্গা অথবা বৃহত্তম কোন জলাময় স্থানের বুকে তিল তিল করে জেগে উঠা এক উর্বর দ্বীপাঞ্চলে দক্ষিণ বঙ্গ থেকে পুন্ডা বা পোদ জাতি অথবা পার্শ্ববর্তী স্থান থেকে বিভিন্ন ধর্মের বর্ণের জাতির কিছু কিছু লোক চাষাবাদ অথবা প্রচুর মাছ সংগ্রহের আশায় এ অঞ্চলে আগমন করে বসতি স্থাপন করেছিলেন বলে অনুমান করা যেতে পারে।
২য় শতাব্দীর শেষ পযর্ন্ত এবং ৪র্থ শতাব্দীর প্রথমার্থে পূর্ব বাংলার সমতট ও পশ্চিম বাংলায় পুস্কারণ রাজ্য অথবা পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্ত শাসনামলে এ অঞ্চলের কোন উল্লেখযোগ্য ইতিহাস সম্পর্কে শত চেষ্টা করেও কিছুই জানা যায়নি। বাংলাদেশে সমতট, বঙ্গ ও গৌড় এই তিন রাজ্যের শাসনামলে মেহেরপুর অঞ্চল কোন সময়ে সমতট আবার কখনো গৌড়ের শাসনাধীন ছিল। তবে এই তিনটি রাজ্যের সঠিক পরিধি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকগণ একমত হতে পারেননি বলে যদ্দুর জানা যায়। খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দী পযর্ন্ত মেহেরপুর কোন রাজার প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে ছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় না। ৬০৬ সালে রাজা শশাঙ্কর রাজত্বকালে চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং বাংলাদেশে ভ্রমণ করে যে বিবরণ দিয়ে গেছেন তা থেকে বিশেষভাবে অবহিত হওয়া যায় যে তৎকালীন বঙ্গ রাজ্য (১) কামরূপ (২) পুষ্পবর্দ্ধন (৩) কর্ণ সুবর্ণ (৪) সমতট ও (৫) তাম্র লিপি এই পাঁচ ভাগে বিভক্ত ছিল। মেহেরপুর অঞ্চল সপ্তম শতাব্দীতে রাজা শশাঙ্কর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে অনুমান করা হয়।
এছাড়া অনুমান করার যথেষ্ট যুক্তি আছে যে, শশাঙ্ক রাজ্যের রাজধানীর ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত মেহেরপুর জনপদ তার প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে ছিল। শশাঙ্কের মৃত্যের পর গৌড় রাজ্য আভ্যন্তরীণ কলহে ও বিবাদে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। রাজা শশাঙ্কের মৃত্যের পর সম্ভবত ৬৪২ সালের দিকে মেহেরপুর কামরূপ রাজ ভাস্কর বর্মার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। শশাঙ্কের মৃত্যুর প্রায় একশত বছরকাল যাবৎ বাংলায় চরম অরাজকতা বিদ্যমান ছিল। সেই সময় কোন রাজাধিরাজ কোন অঞ্চলে তাঁদের শাসনভার বজায় রেখেছিলেন তা আজও পুরোপুরি অমানিশায় আবৃত। অস্টম শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকে বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল বংশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার সময় অনুমান করা হয় মেহেরপুর পাল রাজত্বের শাসনাধীন ছিল এবং পাল রাজত্বের অবসান কাল অর্থাৎ দশম শতাব্দীর শেষ পযর্ন্ত এ অঞ্চল পাল রাজ্যভুক্ত ছিল।
লক্ষণ সেনের রাজত্বকালে ১২০৩ মতান্তরে ১২০৪ সালে বিহার থেকে ঝাড়খন্ডের পথে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী নামক একজন তুর্কী মুসলিম অসীম সাহসী সেনাপতি মাত্র ১৮জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে লক্ষণ সেনের রাজধানী নদীয়া দখল করেছিলেন। বখতিয়ারের পিছনে যে বিরাট সেনাবাহিনী ছিল তাদের মধ্যে মাত্র ১৭ জন অশ্বারোহী তার সঙ্গে দ্রুত আসতে সক্ষম হয়। অবশ্য বখতিয়ারের নদীয়া দখলের চল্লিশ বছর পর মিনহাজ-উস-সিরাজ রচিত ’’তবাকাত-ই-নাসিরী’’ গ্রন্থে উল্লেখ্ করা আছে যে, মাত্র আঠার জন অশ্বারোহী সৈন্য নদীয়া নগরীতে প্রবেশ করলে তাঁদেরকে তুর্কী অশ্ববিক্রেতা মনে করে কেহ বাধাদান করেনি। প্রকৃতপক্ষে সেই সময় লক্ষণ সেন বার্ধক্যজনিত কারণে রাজকার্যে অবহেলা, অমাত্যবর্গ ও রাজমহিষীর নানা ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতিতে সম্ভবত রাস্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল করে ফেলে। যার দরুন তুর্কী আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ও সাহস লক্ষণ সেনের ছিল না।
খিলজী রাজপ্রাসাদে উপস্থিত হয়েই আক্রমণ করেন। যে সময় ’রায় লছমণিয়া সকল কার্যাদি সমাপনে খাদ্য ভক্ষণে বসেছিলেন। তিনি যখন মুসলমান আক্রমণের সংবাদ পেয়ে পুত্র, মহিলা, ধনরত্ন ,সম্পদ, দাসদাসী ও অন্যান্য সকল কিছু পরিত্যাগ করে অন্তঃপুরের দুয়ার দিয়ে নৌকাপথে পলায়ন করেন। বখতিয়ার খিলজী নদীয়া দখল করে গৌড়ে গমন করেছিলেন। বখতিয়ারের নদীয়া বিজয় এ অঞ্চলে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন হিসাবে ধরলেও সেই সময় মুসলিম শাসন কোন স্থায়ীত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। তাঁর নদীয়া বিজয়ের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর মুর্গীস উদ্দীন উজবুক পুনরায় নদীয়া দখল করেন। নদীয়ায় বাংলার প্রথম মুসলমান শাসনের যে সূত্রপাত হয় তাহা প্রায় ছয়শত বছর দীর্ঘস্থায়ী ছিল।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নরপতি হিন্দুরাজা লক্ষণ সেনের রাজত্বের পতনের পর তার রাজধানী নদীয়াতে যে সব মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল তারই ক্রমবিকাশ ঘটে সমগ্র বাংলায় মুসলিম শাসনের ইতিহাস। ১২০৩ অথবা ১২০৪ সাল থেকে ১৭৬৫ সালের বৃটিশ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানীর দেওয়ানী লাভ পর্যন্ত ৫৬১ বৎসরের মধ্যে মোট ৭৬ জন সুবাদার, নাজিম, রাজা ও নবাব বাংলা শাসন করে গেছেন। তাঁদের সকলের শাসনের সময় মেহেরপুর অন্তর্গত ছিল। এই শাসকদের এগার জন সুবাদার ঘোরী ও খিলজী মুসলিম সুলতানদের মনোনীত ছিল, ছাবিবশ জন স্বাধীন শাসনকর্তা অবশ্য এঁদের মধ্যে শেরশাহের আমলের শাসকগণও ছিলেন। অবশিষ্ট চৌত্রিশ জন মোগল সম্রাটদের পছন্দমত। পাঁচজন স্বাধীন রাজার মধ্যে রাজা গণেশ, জালাল উদ্দিন (যদু), শামসদ্দীন আহমেদ শাহ রয়েছেন। এই পাঁচজন এবং রাজা তোডরমল ও রাজা মানসিংহ বাদে প্রায় সকলেই আফগান, তুর্কী, ইরানী ও মোগল বংশের ছিলেন। গৌড়ের রাজা গিয়াস উদ্দীন আযম শাহের সময় ১৩৮৯ থেকে ১৪০৯ সাল গৌড়ের সকল প্রকার রাজত্ব ও শাসন ব্যবস্থার কর্মকর্তা ভাতুরিয়া পরগণার জমিদার রাজা কংস বা গণেশ গৌড় দখল করে স্বাধীন রাজ্যে প্রতিষ্ঠা করেন। গণেশের পরলোকগমনের পর তাঁহার পুত্র যদু যিনি মুসলিম নাম ধারন করে মোঃ জালালউদ্দীন গৌড়ের সিংহাসন পরিচালনা করতে থাকেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সুলতান শামসউদ্দীন আহমদ শাহ উত্তরাধিকার সূত্রে রাজ্য পরিচালনার দায়িত্বভার পান। মূলতঃ এই সময় থেকেই এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রচার কার্য ব্যাপকহারে শুরু হয়। শামসউদ্দীন আহমদ শাহকে নির্মমভাবে হত্যা করে ইখতিয়ার শাহী বংশের নাসির উদ্দীন মহাম্মদ শাহ গৌড় সিংহাসন দখল করেন। সুলতানী আমলে মেহেরপুর একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী অঞ্চল ছিল বলে জানা যায়। চৌদ্দ শতাব্দীতে মেহেরপুরে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য বেশ কিছু আউলিয়া দরবেশ এখানে আগমন করেন।
মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলে মেহেরপুরের বাগোয়ানের ভবানন্দ মজুমদার (তাঁর বাল্য নাম দুর্গাদাশ সমাদ্দার) এক বিশাল রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা ’’নদীয়া রাজবংশ নামে’’ প্রতিষ্ঠালাভ করে। নদীয়া রাজবংশ যে অঞ্চল নিয়ে জমিদারী কায়েম করে রাজ্য গড়ে তোলেন তা ’’নদীয়া’’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এই সময় নদীয়া রাজ্যের জমিদারী এলাকা ছিল ৩,১৫১ বর্গ মাইল। নদীয়া রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদার হুগলীর শাসনকর্তা শাহ ইসমাইল সাহেবের বদন্যতায় তিনি কানুনগো পদ লাভ করতে সক্ষম হন। পরবর্তী পর্যায়ে প্রতাপাদিত্যের সাথে যুদ্ধে মীরজা নাথান ও রাজা মানসিংহকে সাহায্য করার ফলশ্রুতিতে বাদশাহ জাহাঙ্গীরের নিকট হতে ’’ভবানন্দ মজুমদার’’ উপাধি ও জায়গীর লাভ করতে সক্ষম হন। তাঁর জমিদারীর রাজ্য ছিল লেপা, মহৎপুর, মারূপদহ, সুলতানপুর, কাসিমপুর, নদীয়া নিয়ে মোট ১৪টি পরগণা। দুর্গাদাস সমাদ্দার তাঁর পিতৃ জমিদারী তাঁর ভাই জগদীসকে কুড়ুলগাছি, হরিবলস্নভকে ফতেহপুর, টুবুদ্ধিকে পাটিক বাড়ী প্রদান করেন। তিনি নিজের দায়িত্বে রাখেন বল্লভপুর পরগণা। ভবান্দ মজুমদারের রাজ বংশের রাজা রাঘব রায় মাটিয়ার থেকে কৃষ্ণের উপাসক ছিলেন বলে জানা যায়। আর এই প্রসঙ্গ উল্লেখ্য, রাজা রাঘবের পুত্র মহারাজা রুদ্র এই স্থানটির নাম রাখেন কৃষ্ণনগর। পরবর্তীতে এই কৃষ্ণনগর নদীয়া জেলার রাজধানীতে রূপলাভ করে।
১৭৮২ সালে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র নদীয়ার গদীনসীন হন। এই নদীয়ার অন্যতম অঞ্চল ছিল মেহেরপুর এবং রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শাসনাধীনে মেহেরপুর দীর্ঘদিন শাসিত হয়েছে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র যথাযথ সময়ে নদীয়ার প্রচলিত খাজনা পরিশোধ করতে না পারায় নবাব মুর্শীকুলী খাঁ তাকে গ্রেফতার করেন। ১৭৫০ সালের ইতিহাস থেকে জানা যায়, মেহেরপুর শহর ষোড়শ শতাব্দীতে স্থাপিত হলেও তৎকালীন সময়েই এখানে জনবসতি গড়ে উঠেনি। কেননা, ১৭৫০ সালে মোগল শাসনের অধীন নবাবদের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৫০ সালে বাংলার সুবাদার আলীবর্দী খাঁ মেহেরপুরের বাগোয়ান গ্রামে নদীপথে আসতেন শিকার করতে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার ফলে তিনি পরিষদসহ রাজু গোঁসাই নামীয় জনৈকা এক অখ্যাত বিধবা গোয়ালা রমনীর আতিথ্য গ্রহণ করতে বাধ্য হন। নবাব আলীবর্দী খাঁ আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে ভৈরব নদীর পূর্ব তীরস্থ সমগ্র বাগোয়ান মৌজা উক্ত মহিলাকে দান করেন মর্মে কথিতআছে। রাজু গোসাই মহিলার বহু গরু ছিল। আর এই কারণে গোচারণের জন্যই বাগোয়ানের সমগ্র এলাকা তথা মেহেরপুর প্রদান করেন। তাহলে দেখা যায় সপ্তদশ শতকেও মেহেরপুর গোচারণ ভূমি ছিল। এখানে তেমন জনপদ গড়ে ওঠেনি।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধের পূর্ব পযর্ন্ত রাজা গোয়ালা চৌধুরী নদীয়া সদর কৃষ্ণনগর থেকে সরাসরি মেহেরপুর পযর্ন্ত সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। এই সড়ক নির্মাণেই মেহেরপুরের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। বর্গী দস্যূরা মেহেরপুর আক্রমণ করে বিপুল সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যেতো। বর্গীদের অত্যাচার থেকে আত্নরক্ষার জন্য গোয়ালা চৌধুরীর বংশধররা ভূগর্ভে ইট দিয়ে গোপন আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করেন ও সমগ্র এলাকাকে ঘিরে পরীখা খনন করেন। মেহেরপুর পৌরসভার দক্ষিণে সেই ভূগর্ভস্থ আশ্রয় কক্ষে তার ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া গেছে। এর বিলীয়মান বেশ কিছু বৃহত্তর তেঁতুল বৃক্ষ ঐ স্থানে ছিল। যে গাছ থেকে বর্গীদের আক্রমণ লক্ষ করে জনসাধারণকে সতর্ক দেয়া হতো। রাজ্য গোয়ালা চৌধুরী শেষ পযর্ন্ত ইতিহাস কুখ্যাত বর্গী দস্যু নেতা রঘুজী ভোসলার সাথে যুদ্ধে সপরিবাবে নির্মমভাবে নিহত হন বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।
১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে সিরাজউদ্দৌল্লার সংগে ইংরেজদের যুদ্ধে মিরজাফরের বেইমানীতে রবার্ট ক্লাইভ জয়লাভ করায় বাংলার স্বাধীনতা অস্ত যায়। সেই প্রহসনের যুদ্ধে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ক্লাইভের পক্ষে সমর্থন করায় মিঃ ক্লাইভ যুদ্ধে জয়লাভ করে কৃষ্ণচন্দ্রকে রাজেন্দ্র বাহাদুর খেতাবে ভূষিত করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৭৬৫ সালে কৌশলে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভ করতে সমর্থ হয়। এ সময় হতেই নদীয়া তথা মেহেরপুর ইংরেজদের শাসনাধীনে চলে যায়। ১৭৯৬ সালে নদীয়া ও যশোরের সীমানা নির্দিষ্ট হলেও পরবর্তীতে তা কয়েকবার পরিবর্তন হয়। যশোরের সংগে নদীয়া তথা কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ১৮৫৪ অথবা ১৮৫৭ সালে মেহেরপুর মুহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অবিভক্ত নদীয়ার মহকুমা ছিল পাঁচটি যথা- কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, কুষ্টিয়া, চুয়াডাংগা ও মেহেরপুর। মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার পর মেহেরপুরে ৫ টি থানা অন্তভূর্ক্ত হয় যথা-করিমপুর, গাংনী, তেহট্র, চাপড়া ও মেহেরপুর সদর। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে করিমপুর,তেহট্র ও চাপড়া ভারতে অন্তভূর্ক্ত হয়, শুধুমাত্র গাংনী ও মেহেরপুর সদর নিয়ে মেহেরপুর মহকুমা গঠিত হয়।
১৯৮৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী মেহেরপুর পূর্নাংগ জেলার মর্যাদা লাভ করেন। ২০০০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী মেহেরপুর সদর উপজেলা বিভক্ত হয়ে মুজিবনগর উপজেলার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় তিনটি উপজেলা রয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ
১। মেহেরপিডিয়া, জনাব মোঃ জিয়াউর রহমান খান, প্রাক্তন জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর।
২। মেহেরেপুরের ইতিহাস -সৈয়দ আমিনুল ইসলাম।
৩। মেহেরপুর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য- তোজাম্মেল আজম।
৪। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ , মেহেরপুর জেলা – রফিকুর রশিদ।
মেহেররপুর নামকরণ সম্পর্কে এ পযর্ন্ত দুটি অনুমানসিদ্ধ তথ্য পাওয়া গেছে। একটি হচ্ছে ইসলাম প্রচারক দরবেশ মেহের আলী নামীয় জনৈক ব্যক্তির নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ষোড়শ শতকের অথবা তার কিছুকাল ধরে মেহেরপুর নামকরণের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়ত বচনকার মিহির ও তার পুত্রবধূ খনা এই শহরে বাস করতেন বলে প্রচলিত আছে। মিহিরের নাম থেকে মিহিরপুর পরবর্তীতে তা অপভ্রংশ হয়ে মেহেরপুর নামের উৎপত্তি হয়েছে।
খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দীতে স্বনামধন্য ও খ্যাতিমান ভৌগালিক মিঃ টলেমির মানচিত্র গঙ্গা নদীর অববাহিকায় বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ পরিলক্ষিত হয়। এই ক্ষুদ্র দ্বীপাঞ্চলকে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর অঞ্চল বলে মনে করা হয়। গঙ্গা অথবা বৃহত্তম কোন জলাময় স্থানের বুকে তিল তিল করে জেগে উঠা এক উর্বর দ্বীপাঞ্চলে দক্ষিণ বঙ্গ থেকে পুন্ডা বা পোদ জাতি অথবা পার্শ্ববর্তী স্থান থেকে বিভিন্ন ধর্মের বর্ণের জাতির কিছু কিছু লোক চাষাবাদ অথবা প্রচুর মাছ সংগ্রহের আশায় এ অঞ্চলে আগমন করে বসতি স্থাপন করেছিলেন বলে অনুমান করা যেতে পারে।
২য় শতাব্দীর শেষ পযর্ন্ত এবং ৪র্থ শতাব্দীর প্রথমার্থে পূর্ব বাংলার সমতট ও পশ্চিম বাংলায় পুস্কারণ রাজ্য অথবা পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্ত শাসনামলে এ অঞ্চলের কোন উল্লেখযোগ্য ইতিহাস সম্পর্কে শত চেষ্টা করেও কিছুই জানা যায়নি। বাংলাদেশে সমতট, বঙ্গ ও গৌড় এই তিন রাজ্যের শাসনামলে মেহেরপুর অঞ্চল কোন সময়ে সমতট আবার কখনো গৌড়ের শাসনাধীন ছিল। তবে এই তিনটি রাজ্যের সঠিক পরিধি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকগণ একমত হতে পারেননি বলে যদ্দুর জানা যায়। খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দী পযর্ন্ত মেহেরপুর কোন রাজার প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে ছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় না। ৬০৬ সালে রাজা শশাঙ্কর রাজত্বকালে চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং বাংলাদেশে ভ্রমণ করে যে বিবরণ দিয়ে গেছেন তা থেকে বিশেষভাবে অবহিত হওয়া যায় যে তৎকালীন বঙ্গ রাজ্য (১) কামরূপ (২) পুষ্পবর্দ্ধন (৩) কর্ণ সুবর্ণ (৪) সমতট ও (৫) তাম্র লিপি এই পাঁচ ভাগে বিভক্ত ছিল। মেহেরপুর অঞ্চল সপ্তম শতাব্দীতে রাজা শশাঙ্কর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে অনুমান করা হয়।
এছাড়া অনুমান করার যথেষ্ট যুক্তি আছে যে, শশাঙ্ক রাজ্যের রাজধানীর ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত মেহেরপুর জনপদ তার প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে ছিল। শশাঙ্কের মৃত্যের পর গৌড় রাজ্য আভ্যন্তরীণ কলহে ও বিবাদে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। রাজা শশাঙ্কের মৃত্যের পর সম্ভবত ৬৪২ সালের দিকে মেহেরপুর কামরূপ রাজ ভাস্কর বর্মার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। শশাঙ্কের মৃত্যুর প্রায় একশত বছরকাল যাবৎ বাংলায় চরম অরাজকতা বিদ্যমান ছিল। সেই সময় কোন রাজাধিরাজ কোন অঞ্চলে তাঁদের শাসনভার বজায় রেখেছিলেন তা আজও পুরোপুরি অমানিশায় আবৃত। অস্টম শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকে বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল বংশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার সময় অনুমান করা হয় মেহেরপুর পাল রাজত্বের শাসনাধীন ছিল এবং পাল রাজত্বের অবসান কাল অর্থাৎ দশম শতাব্দীর শেষ পযর্ন্ত এ অঞ্চল পাল রাজ্যভুক্ত ছিল।
লক্ষণ সেনের রাজত্বকালে ১২০৩ মতান্তরে ১২০৪ সালে বিহার থেকে ঝাড়খন্ডের পথে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী নামক একজন তুর্কী মুসলিম অসীম সাহসী সেনাপতি মাত্র ১৮জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে লক্ষণ সেনের রাজধানী নদীয়া দখল করেছিলেন। বখতিয়ারের পিছনে যে বিরাট সেনাবাহিনী ছিল তাদের মধ্যে মাত্র ১৭ জন অশ্বারোহী তার সঙ্গে দ্রুত আসতে সক্ষম হয়। অবশ্য বখতিয়ারের নদীয়া দখলের চল্লিশ বছর পর মিনহাজ-উস-সিরাজ রচিত ’’তবাকাত-ই-নাসিরী’’ গ্রন্থে উল্লেখ্ করা আছে যে, মাত্র আঠার জন অশ্বারোহী সৈন্য নদীয়া নগরীতে প্রবেশ করলে তাঁদেরকে তুর্কী অশ্ববিক্রেতা মনে করে কেহ বাধাদান করেনি। প্রকৃতপক্ষে সেই সময় লক্ষণ সেন বার্ধক্যজনিত কারণে রাজকার্যে অবহেলা, অমাত্যবর্গ ও রাজমহিষীর নানা ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতিতে সম্ভবত রাস্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল করে ফেলে। যার দরুন তুর্কী আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ও সাহস লক্ষণ সেনের ছিল না।
খিলজী রাজপ্রাসাদে উপস্থিত হয়েই আক্রমণ করেন। যে সময় ’রায় লছমণিয়া সকল কার্যাদি সমাপনে খাদ্য ভক্ষণে বসেছিলেন। তিনি যখন মুসলমান আক্রমণের সংবাদ পেয়ে পুত্র, মহিলা, ধনরত্ন ,সম্পদ, দাসদাসী ও অন্যান্য সকল কিছু পরিত্যাগ করে অন্তঃপুরের দুয়ার দিয়ে নৌকাপথে পলায়ন করেন। বখতিয়ার খিলজী নদীয়া দখল করে গৌড়ে গমন করেছিলেন। বখতিয়ারের নদীয়া বিজয় এ অঞ্চলে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন হিসাবে ধরলেও সেই সময় মুসলিম শাসন কোন স্থায়ীত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। তাঁর নদীয়া বিজয়ের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর মুর্গীস উদ্দীন উজবুক পুনরায় নদীয়া দখল করেন। নদীয়ায় বাংলার প্রথম মুসলমান শাসনের যে সূত্রপাত হয় তাহা প্রায় ছয়শত বছর দীর্ঘস্থায়ী ছিল।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নরপতি হিন্দুরাজা লক্ষণ সেনের রাজত্বের পতনের পর তার রাজধানী নদীয়াতে যে সব মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল তারই ক্রমবিকাশ ঘটে সমগ্র বাংলায় মুসলিম শাসনের ইতিহাস। ১২০৩ অথবা ১২০৪ সাল থেকে ১৭৬৫ সালের বৃটিশ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানীর দেওয়ানী লাভ পর্যন্ত ৫৬১ বৎসরের মধ্যে মোট ৭৬ জন সুবাদার, নাজিম, রাজা ও নবাব বাংলা শাসন করে গেছেন। তাঁদের সকলের শাসনের সময় মেহেরপুর অন্তর্গত ছিল। এই শাসকদের এগার জন সুবাদার ঘোরী ও খিলজী মুসলিম সুলতানদের মনোনীত ছিল, ছাবিবশ জন স্বাধীন শাসনকর্তা অবশ্য এঁদের মধ্যে শেরশাহের আমলের শাসকগণও ছিলেন। অবশিষ্ট চৌত্রিশ জন মোগল সম্রাটদের পছন্দমত। পাঁচজন স্বাধীন রাজার মধ্যে রাজা গণেশ, জালাল উদ্দিন (যদু), শামসদ্দীন আহমেদ শাহ রয়েছেন। এই পাঁচজন এবং রাজা তোডরমল ও রাজা মানসিংহ বাদে প্রায় সকলেই আফগান, তুর্কী, ইরানী ও মোগল বংশের ছিলেন। গৌড়ের রাজা গিয়াস উদ্দীন আযম শাহের সময় ১৩৮৯ থেকে ১৪০৯ সাল গৌড়ের সকল প্রকার রাজত্ব ও শাসন ব্যবস্থার কর্মকর্তা ভাতুরিয়া পরগণার জমিদার রাজা কংস বা গণেশ গৌড় দখল করে স্বাধীন রাজ্যে প্রতিষ্ঠা করেন। গণেশের পরলোকগমনের পর তাঁহার পুত্র যদু যিনি মুসলিম নাম ধারন করে মোঃ জালালউদ্দীন গৌড়ের সিংহাসন পরিচালনা করতে থাকেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সুলতান শামসউদ্দীন আহমদ শাহ উত্তরাধিকার সূত্রে রাজ্য পরিচালনার দায়িত্বভার পান। মূলতঃ এই সময় থেকেই এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রচার কার্য ব্যাপকহারে শুরু হয়। শামসউদ্দীন আহমদ শাহকে নির্মমভাবে হত্যা করে ইখতিয়ার শাহী বংশের নাসির উদ্দীন মহাম্মদ শাহ গৌড় সিংহাসন দখল করেন। সুলতানী আমলে মেহেরপুর একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী অঞ্চল ছিল বলে জানা যায়। চৌদ্দ শতাব্দীতে মেহেরপুরে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য বেশ কিছু আউলিয়া দরবেশ এখানে আগমন করেন।
মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলে মেহেরপুরের বাগোয়ানের ভবানন্দ মজুমদার (তাঁর বাল্য নাম দুর্গাদাশ সমাদ্দার) এক বিশাল রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা ’’নদীয়া রাজবংশ নামে’’ প্রতিষ্ঠালাভ করে। নদীয়া রাজবংশ যে অঞ্চল নিয়ে জমিদারী কায়েম করে রাজ্য গড়ে তোলেন তা ’’নদীয়া’’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এই সময় নদীয়া রাজ্যের জমিদারী এলাকা ছিল ৩,১৫১ বর্গ মাইল। নদীয়া রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদার হুগলীর শাসনকর্তা শাহ ইসমাইল সাহেবের বদন্যতায় তিনি কানুনগো পদ লাভ করতে সক্ষম হন। পরবর্তী পর্যায়ে প্রতাপাদিত্যের সাথে যুদ্ধে মীরজা নাথান ও রাজা মানসিংহকে সাহায্য করার ফলশ্রুতিতে বাদশাহ জাহাঙ্গীরের নিকট হতে ’’ভবানন্দ মজুমদার’’ উপাধি ও জায়গীর লাভ করতে সক্ষম হন। তাঁর জমিদারীর রাজ্য ছিল লেপা, মহৎপুর, মারূপদহ, সুলতানপুর, কাসিমপুর, নদীয়া নিয়ে মোট ১৪টি পরগণা। দুর্গাদাস সমাদ্দার তাঁর পিতৃ জমিদারী তাঁর ভাই জগদীসকে কুড়ুলগাছি, হরিবলস্নভকে ফতেহপুর, টুবুদ্ধিকে পাটিক বাড়ী প্রদান করেন। তিনি নিজের দায়িত্বে রাখেন বল্লভপুর পরগণা। ভবান্দ মজুমদারের রাজ বংশের রাজা রাঘব রায় মাটিয়ার থেকে কৃষ্ণের উপাসক ছিলেন বলে জানা যায়। আর এই প্রসঙ্গ উল্লেখ্য, রাজা রাঘবের পুত্র মহারাজা রুদ্র এই স্থানটির নাম রাখেন কৃষ্ণনগর। পরবর্তীতে এই কৃষ্ণনগর নদীয়া জেলার রাজধানীতে রূপলাভ করে।
১৭৮২ সালে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র নদীয়ার গদীনসীন হন। এই নদীয়ার অন্যতম অঞ্চল ছিল মেহেরপুর এবং রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শাসনাধীনে মেহেরপুর দীর্ঘদিন শাসিত হয়েছে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র যথাযথ সময়ে নদীয়ার প্রচলিত খাজনা পরিশোধ করতে না পারায় নবাব মুর্শীকুলী খাঁ তাকে গ্রেফতার করেন। ১৭৫০ সালের ইতিহাস থেকে জানা যায়, মেহেরপুর শহর ষোড়শ শতাব্দীতে স্থাপিত হলেও তৎকালীন সময়েই এখানে জনবসতি গড়ে উঠেনি। কেননা, ১৭৫০ সালে মোগল শাসনের অধীন নবাবদের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৫০ সালে বাংলার সুবাদার আলীবর্দী খাঁ মেহেরপুরের বাগোয়ান গ্রামে নদীপথে আসতেন শিকার করতে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার ফলে তিনি পরিষদসহ রাজু গোঁসাই নামীয় জনৈকা এক অখ্যাত বিধবা গোয়ালা রমনীর আতিথ্য গ্রহণ করতে বাধ্য হন। নবাব আলীবর্দী খাঁ আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে ভৈরব নদীর পূর্ব তীরস্থ সমগ্র বাগোয়ান মৌজা উক্ত মহিলাকে দান করেন মর্মে কথিতআছে। রাজু গোসাই মহিলার বহু গরু ছিল। আর এই কারণে গোচারণের জন্যই বাগোয়ানের সমগ্র এলাকা তথা মেহেরপুর প্রদান করেন। তাহলে দেখা যায় সপ্তদশ শতকেও মেহেরপুর গোচারণ ভূমি ছিল। এখানে তেমন জনপদ গড়ে ওঠেনি।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধের পূর্ব পযর্ন্ত রাজা গোয়ালা চৌধুরী নদীয়া সদর কৃষ্ণনগর থেকে সরাসরি মেহেরপুর পযর্ন্ত সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। এই সড়ক নির্মাণেই মেহেরপুরের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। বর্গী দস্যূরা মেহেরপুর আক্রমণ করে বিপুল সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যেতো। বর্গীদের অত্যাচার থেকে আত্নরক্ষার জন্য গোয়ালা চৌধুরীর বংশধররা ভূগর্ভে ইট দিয়ে গোপন আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করেন ও সমগ্র এলাকাকে ঘিরে পরীখা খনন করেন। মেহেরপুর পৌরসভার দক্ষিণে সেই ভূগর্ভস্থ আশ্রয় কক্ষে তার ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া গেছে। এর বিলীয়মান বেশ কিছু বৃহত্তর তেঁতুল বৃক্ষ ঐ স্থানে ছিল। যে গাছ থেকে বর্গীদের আক্রমণ লক্ষ করে জনসাধারণকে সতর্ক দেয়া হতো। রাজ্য গোয়ালা চৌধুরী শেষ পযর্ন্ত ইতিহাস কুখ্যাত বর্গী দস্যু নেতা রঘুজী ভোসলার সাথে যুদ্ধে সপরিবাবে নির্মমভাবে নিহত হন বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।
১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে সিরাজউদ্দৌল্লার সংগে ইংরেজদের যুদ্ধে মিরজাফরের বেইমানীতে রবার্ট ক্লাইভ জয়লাভ করায় বাংলার স্বাধীনতা অস্ত যায়। সেই প্রহসনের যুদ্ধে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ক্লাইভের পক্ষে সমর্থন করায় মিঃ ক্লাইভ যুদ্ধে জয়লাভ করে কৃষ্ণচন্দ্রকে রাজেন্দ্র বাহাদুর খেতাবে ভূষিত করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৭৬৫ সালে কৌশলে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভ করতে সমর্থ হয়। এ সময় হতেই নদীয়া তথা মেহেরপুর ইংরেজদের শাসনাধীনে চলে যায়। ১৭৯৬ সালে নদীয়া ও যশোরের সীমানা নির্দিষ্ট হলেও পরবর্তীতে তা কয়েকবার পরিবর্তন হয়। যশোরের সংগে নদীয়া তথা কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ১৮৫৪ অথবা ১৮৫৭ সালে মেহেরপুর মুহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অবিভক্ত নদীয়ার মহকুমা ছিল পাঁচটি যথা- কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, কুষ্টিয়া, চুয়াডাংগা ও মেহেরপুর। মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার পর মেহেরপুরে ৫ টি থানা অন্তভূর্ক্ত হয় যথা-করিমপুর, গাংনী, তেহট্র, চাপড়া ও মেহেরপুর সদর। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে করিমপুর,তেহট্র ও চাপড়া ভারতে অন্তভূর্ক্ত হয়, শুধুমাত্র গাংনী ও মেহেরপুর সদর নিয়ে মেহেরপুর মহকুমা গঠিত হয়।
১৯৮৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী মেহেরপুর পূর্নাংগ জেলার মর্যাদা লাভ করেন। ২০০০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী মেহেরপুর সদর উপজেলা বিভক্ত হয়ে মুজিবনগর উপজেলার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় তিনটি উপজেলা রয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ
১। মেহেরপিডিয়া, জনাব মোঃ জিয়াউর রহমান খান, প্রাক্তন জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর।
২। মেহেরেপুরের ইতিহাস -সৈয়দ আমিনুল ইসলাম।
৩। মেহেরপুর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য- তোজাম্মেল আজম।
৪। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ , মেহেরপুর জেলা – রফিকুর রশিদ।
Labels:recent
recent
recent
11:24 AM
ভৌগলিক পরিচিতি
মেহেরপুর জেলা ২৩.৪৪/ থেকে ২৩.৫৯/ ডিগ্রী অক্ষাংশ এবং ৮৮.৩৪/ থেকে ৮৮.৫৩/ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের পশ্চিমাংশের সীমান্তবর্তী জেলা। এ জেলার উত্তরে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানা ও পশ্চিমবঙ্গ (ভারত); দক্ষিণে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবনগর, দামুড়হুদা থানা ও পশ্চিসমবঙ্গ (ভারত); পূর্বে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। মেহেরপুরের পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত প্রায় ৬০ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে। ভারতের সাথে এ জেলার ১১৮ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে।
Labels:recent
recent
recent
11:14 AM
নামকরণ
মেহেরপুর নামকরণ সম্পর্কে এ পর্যন্ত দুটি অনুমানসিদ্ধ তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। একটি হচ্ছে ইসলাম প্রচারক দরবেশ মেহের আলী নামীয় জনৈক ব্যক্তির নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ষোড়শ শতকের অথরা তার কিছুকাল পরে মেহেরপুর নামকরণের সৃষ্টি হয়েছে।
এ অঞ্চলে মুসলিম শাসনের সূত্রপাত হতেই ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু হয়েছিল। বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বারোবাজার, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ প্রভৃতি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচার শুরু করেন হযরত খাঁন জাহান আলী (রাঃ)। পীর খান জাহান আলী গৌড় থেকে ভৈরব নদী পথে মেহেরপুর হয়ে বারোবাজার গিয়ে বাগেরহাট গিয়েছিলেন। তার সাথে সেই সময়ে ৩৬০ জন দরবেশ ও ৬০ হাজার সৈন্য ছিল বলে কথিত আছে। তিনি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চরে ইসলামের বিজয় পতাকা উত্তোলন করে জনবসতি ও শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেন। এ অঞ্চলে ঐ একই সময়েই বেশ কয়েকজন ইসলামের ঝান্ডাবাহক আল্লাহর পরম আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটে। শাহ ভালাই, শাহ আলাই ও এনায়েত উল্লাহর নাম উল্লেখযোগ্য। পুণ্য আত্না ইসলামের ঝান্ডাবাহক দরবেশ মেহের আলী শাহ-এর নামের সাথে সঙ্গতি রেখে মেহেরপুর নামকরণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
যতদূর জানা যায় তাতে মেহের আলী অত্যন্ত প্রভাবশালী খ্যাতিমান আধ্যাত্নিক ব্যক্তি হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন। যার ফলে তাঁর নামের প্রাধান্য পেয়ে যায়।
মেহেরপুর নামকরণের উৎপত্তি সম্পর্কে দ্বিতীয় দিকটি এখানে উল্লেখ্য, পূর্ববঙ্গ রেলওয়ের বাংলায় ভ্রমণ গ্রন্থে বিখ্যাত বচনকার মিহির ও তাঁর নিজের পুত্রবধু খনা (খনার বচন বিখ্যাত) ভৈরব নদীর তীরস্থ এ অঞ্চলে বাস করতেন। তার নামানুসারে প্রথমে মিহিরপুর এবং পরবর্তীতে অপভ্রংশে মেহেরপুর নামকরণ হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।
এ অঞ্চলে মুসলিম শাসনের সূত্রপাত হতেই ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু হয়েছিল। বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বারোবাজার, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ প্রভৃতি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচার শুরু করেন হযরত খাঁন জাহান আলী (রাঃ)। পীর খান জাহান আলী গৌড় থেকে ভৈরব নদী পথে মেহেরপুর হয়ে বারোবাজার গিয়ে বাগেরহাট গিয়েছিলেন। তার সাথে সেই সময়ে ৩৬০ জন দরবেশ ও ৬০ হাজার সৈন্য ছিল বলে কথিত আছে। তিনি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চরে ইসলামের বিজয় পতাকা উত্তোলন করে জনবসতি ও শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেন। এ অঞ্চলে ঐ একই সময়েই বেশ কয়েকজন ইসলামের ঝান্ডাবাহক আল্লাহর পরম আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটে। শাহ ভালাই, শাহ আলাই ও এনায়েত উল্লাহর নাম উল্লেখযোগ্য। পুণ্য আত্না ইসলামের ঝান্ডাবাহক দরবেশ মেহের আলী শাহ-এর নামের সাথে সঙ্গতি রেখে মেহেরপুর নামকরণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
যতদূর জানা যায় তাতে মেহের আলী অত্যন্ত প্রভাবশালী খ্যাতিমান আধ্যাত্নিক ব্যক্তি হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন। যার ফলে তাঁর নামের প্রাধান্য পেয়ে যায়।
মেহেরপুর নামকরণের উৎপত্তি সম্পর্কে দ্বিতীয় দিকটি এখানে উল্লেখ্য, পূর্ববঙ্গ রেলওয়ের বাংলায় ভ্রমণ গ্রন্থে বিখ্যাত বচনকার মিহির ও তাঁর নিজের পুত্রবধু খনা (খনার বচন বিখ্যাত) ভৈরব নদীর তীরস্থ এ অঞ্চলে বাস করতেন। তার নামানুসারে প্রথমে মিহিরপুর এবং পরবর্তীতে অপভ্রংশে মেহেরপুর নামকরণ হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।
Labels:recent
recent
Thursday, March 27, 2014
Thursday, March 20, 2014
visiting palce
8:18 AM
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ
Consists of 9 wards and 72 mahallas. It has an area of 13.62 sq
km. The population of the town is 35771; male 52.33%, female 47.67%.
The density of population is 2626 per sq km. Literacy rate among
the town people is 49.4%. The town was established in the beginning
of the 16th century. Meherpur municipality was established in
1960.
Labels:recent
recent,
rr,
visiting palce