মেহেরপুর অবিভক্ত নদীয়া জেলার অন্যতম প্রাচীন এতিহ্যময় একটি মহুকুমা। নদীয়া মহুকুমা তৎকালীন সময়ে অবিভক্ত সমগ্র বাংলার সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র ছিল। এ সম্পর্কে বিখ্যাত গবেষক ড: মুহম্মদ এনামুল হক তার বঙ্গে সূফী প্রভাব গ্রন্থের ১৯৬-১৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, বাঙালাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির কেন্দ্র ছিল নদীয়া।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর কুষ্টিয়ায় লালন শাহের লালনগীতির ব্যাপক চর্চার প্রভাব মেহেরপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে প্রভাবিত করেছে। এছাড়া মেহেরপুরের লোক সংস্কৃতি বাউলগীতি, আঞ্চলিক গীতি, নাট্য চর্চা, ভাসানগান ও মানিকপীরের গান উল্লেখ্যযোগ্য।
মেহেরপুরের লোক সংস্কৃতি ঃ মেহেরপুর নদীয়ার প্রাচীন জনপদ হওয়ায় লোকসংস্কৃতি বা গ্রামীণ সংস্কৃতি বিভিন্ন চর্চার মাধ্যমে দীর্ঘকাল ধরে এক ঐতিহ্যের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালীর সমাজজীবনে নানা উৎসব আয়োজন নানা ধরনের গীত, কবিগান, ভাবগান পুথিপাঠ, মেঠো গান, মানসার গান, ভাসানগান, ছেলে নাচানো গান, মানিকপীরের গান, বোলান গান, অষ্টগান, গাজীর গীত ও কৃষ্ণযাত্রা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
মেহেরপুরের লোকসংস্কৃতি বিভিন্ন দিকে এ অধ্যয়ে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো ঃ
বাউলগীতি ঃ বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম অঞ্চল হচ্ছে মেহেরপুর। কুষ্টিয়ার বাউল সম্রাট লালন শাহ্ এর প্রভাবে মেহেরপুরে অসংখ্য বাউল অনুরাগী ও বাউল সঙ্গীতে পারদর্শী গায়কের সৃষ্টি হয়েছে। মেহেরপুরে এখনো শত শত বাউল অনুরাগী বিদ্যমান। লোকসংস্কৃতির অন্যতম বাহক বাউল সঙ্গীত, লালনের জীবনাদর্শ তাদের ব্যক্তিজীবনে চর্চা অব্যাহত রেখেছেন।
মানিকপীরের গান ঃ মানিক পীর মুসলমান ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের গৃহস্থের নিকট সমভাবে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে আছেন। মেহেরপুরের লোক সংস্কৃতি ঐতিহ্যে মানকিপীরের গান এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে স্বীকৃত। মেহেরপুরের গামাঞ্চলে বিশেষ করে বুড়িপোতা ও পিরোজপুর ইউনিয়নের গ্রমাগুলোতে মানিকপীরের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে বুড়িপোতা ও পিরাজপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে মানিকপীরের গানের অত্যাধিক প্রচলর রয়েছে। পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে মানিকপীরের গান গেয়ে কেউ কেউ বাড়ী বাড়ী ভিক্ষা করে বেড়ায়। মেহেরপুর অঞ্চলে প্রচলিত মানিকপীরের গানের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো ঃ
“মানিকের নামে তোমরা হেলা করো না
মানিকের নাম থাকলে বিপদ হবে না।
মানিকের নামে চালপয়সা যে করিবে দান
গাইলে হবে গরু বাছুর ক্ষেতে ফলবে ধান।”
ভাসান গান ঃ মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে ভাসান গানের দল রয়েছে। এই গানের বৈশিষ্ট হলো ঃ তিনটি পালা করে গায়করা গান গেয়ে থাকেন। জন্মপালা, বাঁচার পালা ও মৃত্যুপালা। মৃত্যু পালা হচ্ছে শ্রোতাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। শীতকালে বাড়ী বাড়ী ভাসান গানের আসর বসে থাকে। সারারাত ধরে এ গানের আসর চলে থাকে। ভাসান গানের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো ঃ
“ওকি সাধ আছে হে দিতে লকায়ে বিয়ে
আর কিছুদিন রাখবো ঘরে ধলো খেলা দিয়ে।”
বিয়ের গান ঃ লোক সংস্কৃতির ভান্ডার অফুরন্ত। প্রতিনিয়ত এর উপাদন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আধুনিকতার উষ্ণ আবেদনের প্রেক্ষিতে অতীতের অনেক মূল্যবান লোকসংস্কৃতি হারিয়ে গেছে। তবে মেহেরপুরের গ্রামগুলোতে অশিক্ষিত, মুর্খ মেয়েরা অনায়াসে শত শত পুংক্তি বিয়ের গান অনর্গল মুখস্ত বরে যেতে পারে। এ সমস্ত গান তারা নিজেরাই সৃষ্টি করে থাকে।
বিয়ের গান ঃ “দুলাভাই গিয়েছে শহরে,
আনবে নাকেরনথরে
সেই নথ নাকে দিয়ে
নাক ঘুরিয়েনাচবোরে।”
আরেকটি বিয়ের গানের কিছু অংশ ঃ
“গাঙ্গের ধারে বাধলাম বাড়ি
ডাবি নারিকেল সারিসারি
আমি বিবিকে পরাতে চেয়েলাম
মানিকরতন।”
সারীগান ঃ এই গান হচ্ছে কর্ম সংগীত। মেহেরপুর অঞ্চলে শারীগানের প্রভাব আজো বিদ্যামান। পাকা ঘরের জলছাদ পেটানো কোন ভারী কাজের সময় মনে জোর সৃষ্টির জন্য শারীগান গাওয়া হয়ে থাকে।
জারীগান ঃ জারীগান মূলত ঃ ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে সৃষ্টি। মেহেরপুর অঞ্চলে জারীগান মর্হরমের সময় গায়করা দলবদ্ধ হয়ে বাড়ীবাড়ী গেয়ে বেড়ায়। যাদবপুরের বেলাল হোসেন বয়াতি জারীগানের গায়ক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও অনেক জারীগায়ক দল এ অঞ্চলে রয়েছে। জারীগানের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো ঃ
“ঈমান যে না আনিবে মক্কার উপরে
গুনাগার হয়ে যাবে দোযখ মাজারে
আরে রোমের ও শহরে ছিল
ইব্রাহিম পায়গম্বর.........
বহুদিবস বাদশাহী করে এই দুনিয়ার পর।”
শাস্ত্রগান ঃ একটানা বাদলার দিনে শাস্ত্র গানের কদর দেখা যায়। জমিতে নিড়ানোর সময় অথবা ধান লাগানোর সময়ে শাস্ত্র গান গাওয়া হয়। গ্রামের গৃহস্তের বাড়ীর বৈঠক খানায় বৃষ্টির দিনে কখনো কখনো শাস্ত্রগানের আসর বসে থাকে। শাস্ত্রগানের কাহিনী অনেকটা বর্ণনামুলক। শাস্ত্রগানের উপমা।
“ইমান খাঁটি ভবের খুটি শাস্ত্রের পরিচয়
ইমান দিয়ে দেলকে আগে খাঁটি করা চাই,
নইলে নামাজ হবে নয়
আছে সত্য ঠিক যথার্থ তোমারে জানাই।”
পুঁথিগান ঃ “ওরে ভাই বলি তাই আজব ঘটনা
ওরে সাপ খেলাই সাপুড়ের মেয়ে
নামেতে জরিনা
জরিনার মা নাই বাপ নাই
দাদির কাছে থাকে।
ভাটিয়ালী গান ঃ মেহেরপুরের গ্রামাঞ্চলে এক সময় ভাটিয়ালী গানের ব্যাপক প্রচলন ছিল। ইদানিংকালে অনেক কমে গেছে। গরুর গাড়ীর গাড়োয়ান, নৌকার মাঝি এবং মাঠের রাখালী ভাটিয়ালী গানের গায়ক হিসাবে আজো এই প্রাচীন লোকসংস্কৃতিকে ধারণ করে রেখেছে।
পালা বা যাত্রাগান ঃ পালা বা যাত্রাগান মেহেরপুরের সর্বত্র এখনো পর্যন্ত অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি লোকসংস্কৃতি হিসেবে বিদ্যামান। রূপবান, ভাসানযাত্রা, ইমামযাত্রা, আসমান সিংহের পালাগান উল্লেখযোগ্য। শীতকালের পুরো সময়টুকু এখানকার গ্রামাঞ্চলে, এমনকি মেহেরপুর শহরের কেন্দ্রস্থলেও যাত্রাগানের আসর বসে থাকে।
৫। প্রচলিত খেলাধুলা:
প্রাচীনকাল থেকেই মেহেরপুরে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা হয়ে আসছে। এর মধ্যে হা-ডু-ডু, ডাংগুলি, গাদন, মার্বেল লাঠিখেলা, নৌকাবাইছ, ঘুড়ি উড়ানো, উল্লেখযোগ্য। দাবা, তাস, লুডু, বাঘবন্দী, পাশা খেলা এ অঞ্চলে বহুকাল ধরেই চলছে। উনিশ শতকের দিকে আধুনিক খেলার মধ্যে ফুটবল, হকি, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, টেবিল টেনিস, লন টেনিস প্রভৃতি কেলা মেহেরপুরে প্রচলন রয়েছে। প্রাচীন ঐহিত্যবাহী খেলাধূলার সাথে বর্তমানে মেহেরপুরের আধুনিক খেলার মান এবং অনুশীলন বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফুটবল ঃ ফুটবল খেলা মেহেরপুরের উনিশ শতকের প্রথম দশকে শুরু হয়েছে বলে প্রবীণ খেলোয়াড়দের কাছ থেকে জানা যায়। বাতাবী লেবুকে ফুটবল হিসেবে ব্যবহার করে খেলা করার প্রবনতা চালু ছিল দীর্ঘকাল ধরে। এরপর ১৯৩৯ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক মেহেরপুরে টাউন ফুটবল ক্লাব প্রথম প্রতিষ্ঠিত করেন। এই ক্লাবের তত্ত্ববধানে বর্তমানের স্টেডিয়াম মাঠে ফুটবল খেলা শুরু হয়।
লাঠিখেলা ঃ “বাংলাদেশের বাঁশের লাঠি বঙ্গে তীতুমীর
বিশ্বব্যাপী পরিচিত বাঙ্গালী জাতির ।”
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীতে বরেন্দ্রভূমির বিদ্রোহী কৈবত্তদের দলপতি দিবেবাক প্রাথমিক হাতিয়ার লাঠিকে ব্যবহার করে তৎকালীন বাংলার দ্বিতীয় পাল রাজবংশের রাজধানী গৌড় দখল করেছিলেন। খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর পূর্বে পাক ভারত উপমহাদেশের যুদ্ধে হাতিয়াররূপে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার প্রচলিত ছিল না। তখন দেশী অস্ত্র উপকরণ হিসেবে যুদ্ধে ব্যবহৃত হতো। সৈন্যদলের পাশ্চত্য ভাগ সাধারণতঃ লাঠি অথবা বল্লম তাতে প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হতো। অর্থাৎ যুদ্ধে লাঠিকে প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করার কথা অনুমান করা হয়ে থাকে। উনবিংশ শতাব্দীতে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে ফকির ও সন্নাসীগন কর্তৃক লাঠিকেই প্রথম অস্ত্ররূপে বেছে নেয়া হয়েছে। নারকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লায় সৈয়দ নিসার আলী ওরফে তীতুমীর লাঠিকেই হাতিয়াররূপে ব্যবহার করে বৃটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে অত্যাচারিত কৃষকরা লাঠি হাতেই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। কোন কোন ক্ষেত্রে বিজয়ী হয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যময় লাঠিখেলার বিশাল ইতিহাস মেহরপুরে ছাড়িয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর প্রেসিডেন্টের জন্মস্থান হচ্ছে মেহেরপুরে।
মাল খেলা বা কুস্তি খেলা ঃ প্রাচীন সংস্কৃতির ঐতিহ্যের প্রশাখায় মাল বা কুস্তি খেলা এক অনবদ্য নৈপুূন্য সম্পন্নখেলা। এক সময় মালখেলা মেহেরপুরে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। ১৯৪৫ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মেহেরপুরে মাল খেলার প্রচলন লক্ষ্যণীয় ছিল। পরবর্তীতে ক্রমে ক্রমে এ খেলার বিলুপ্তি ঘটেছে। মেহেরপুরের গ্রামঞ্চল মাল খেলার প্রচলন ছিল সর্বাধিক।
লনটেনিস ঃ যদিও অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও আধনিক খেলা তবুও মেহেরপুরে ১৯৪৫ সাল থেকে এর প্রচলন রয়েছে। তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমা প্রশাসকের বাসভক্ষনের পূর্বদিকে বর্তমানে জেলা পরিষদের পিছনে লন টেনিসের খেলার জন্য একটি গ্রাস কোর্ট স্থাপিত হয়েছিল। তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এম এ তাহের এই গ্রাস কোট স্থাপন করেছিলেন বলে অনুমান করা হয়। অবশ্য ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পরপর লন টেনিস মাঠ নির্মাণ করেন।
মেহেরপুরের বৈবাহিক অবস্থার বিবরণ ঃ মেহেরপুরের বৈবাহিক অবস্থার বিবরণ সমগ্র বাংলাদেশের ন্যায় একইরূপ। প্রাচীন আমলে মুসলিম সূরা অনুসারে বিবাহের কার্যাদি সুসম্পন্ন করা হতো মৌলভী এবং মসজিদের ইমামদের দ্বারা। এ সময় বিবাহ নিবন্ধন করার কোন আইন বা রেওয়াজ প্রচলিত ছিল না। ১৮৭৬ সালে এই উপমহাদেশে বিবাহ নিবন্ধন ১ আইনের ৬ ধারার বিধানমতে যেকোন বিবাহ বা তালাকের বিষয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চালু করা হয়। দেশে এ আইনের প্রচলনের পর মেহেরপুর মহকুমার সর্বপ্রথম মৌলভী আবদুল হাকিম সরকারী মুসলিম বিবাহ নিবন্ধক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তিনি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মেহেরপুর মহকুমায় এ দায়িত্ব পালন করেন। গাংনিতে মৌলানা নাজির আহমেদ সমসাময়িক সময়ে অত্র এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৬১ সালে মুসলিম পারিবারিক অর্ডিন্যান্স জারী করা হয়। এই অর্ডিন্যান্সের বলে ইউনিয়ন পর্যায়ের চেয়ারম্যানরা স্ব স্ব ইউনিয়নের এক বা একাধিক বিবাহ নিবন্ধক নিয়োগ করার ক্ষমতা প্রাপ্ত হন।
এ অঞ্চলে প্রাচীনকাল থেকে বাল্যবিবাহের প্রথা চালু রয়েছে। বর্তমানে বাল্যবিবাহ আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ হলেও মেহেরপুরের গ্রামাঞ্চলে শতকরা আশি ভাগই বাল্যবিবাহ হয়ে থাকে। তবে পৌর এলাকায় বাল্যবিবাহের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
আতিথিয়োতা ও আচার ব্যবহার ঃ মেহেরপুরের সর্বস্তরের অধিবাসীদের জীবনধারায় অকৃত্রিম আতিথিয়োতা আজো বিরাজমান। গ্রামাঞ্চলে গোরস্থ বাড়ীতে বেড়াতে গেলে চিড়া, মুড়ি মুড়কী অথবা গুড়ের শরবৎ দেওয়ার রেওয়াজ চালু ছিল। আর সেই সাথে মুরগীর গোস্ত দিয়ে ভাত খেতে দিতো। এছাড়া নারিকেলের নাড়–, দই, সন্দেশ খাবার হিসাবে দেয়া হতো বিয়ে মুসলমানী, অন্ন প্রসন্ন জন্মবার্ষিকীতে অনেক সময় আত্মীয় বেড়াতে আসলে তাদের লুঙ্গী গেঞ্জী, শাড়ী শায়া উপহার দেয়ার রীতি রয়েছে। বিয়ের কথাবার্তা পাকাপোক্ত হয়ে গেলে লগনে বিশেষ করে রুই মাছ আর এক হাড়ি মিষ্টি বর কনে উভয় পক্ষের বাড়ীতে পাঠানোর রেওয়াজ রয়েছে।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর কুষ্টিয়ায় লালন শাহের লালনগীতির ব্যাপক চর্চার প্রভাব মেহেরপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে প্রভাবিত করেছে। এছাড়া মেহেরপুরের লোক সংস্কৃতি বাউলগীতি, আঞ্চলিক গীতি, নাট্য চর্চা, ভাসানগান ও মানিকপীরের গান উল্লেখ্যযোগ্য।
মেহেরপুরের লোক সংস্কৃতি ঃ মেহেরপুর নদীয়ার প্রাচীন জনপদ হওয়ায় লোকসংস্কৃতি বা গ্রামীণ সংস্কৃতি বিভিন্ন চর্চার মাধ্যমে দীর্ঘকাল ধরে এক ঐতিহ্যের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালীর সমাজজীবনে নানা উৎসব আয়োজন নানা ধরনের গীত, কবিগান, ভাবগান পুথিপাঠ, মেঠো গান, মানসার গান, ভাসানগান, ছেলে নাচানো গান, মানিকপীরের গান, বোলান গান, অষ্টগান, গাজীর গীত ও কৃষ্ণযাত্রা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
মেহেরপুরের লোকসংস্কৃতি বিভিন্ন দিকে এ অধ্যয়ে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো ঃ
বাউলগীতি ঃ বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম অঞ্চল হচ্ছে মেহেরপুর। কুষ্টিয়ার বাউল সম্রাট লালন শাহ্ এর প্রভাবে মেহেরপুরে অসংখ্য বাউল অনুরাগী ও বাউল সঙ্গীতে পারদর্শী গায়কের সৃষ্টি হয়েছে। মেহেরপুরে এখনো শত শত বাউল অনুরাগী বিদ্যমান। লোকসংস্কৃতির অন্যতম বাহক বাউল সঙ্গীত, লালনের জীবনাদর্শ তাদের ব্যক্তিজীবনে চর্চা অব্যাহত রেখেছেন।
মানিকপীরের গান ঃ মানিক পীর মুসলমান ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের গৃহস্থের নিকট সমভাবে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে আছেন। মেহেরপুরের লোক সংস্কৃতি ঐতিহ্যে মানকিপীরের গান এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে স্বীকৃত। মেহেরপুরের গামাঞ্চলে বিশেষ করে বুড়িপোতা ও পিরোজপুর ইউনিয়নের গ্রমাগুলোতে মানিকপীরের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে বুড়িপোতা ও পিরাজপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে মানিকপীরের গানের অত্যাধিক প্রচলর রয়েছে। পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে মানিকপীরের গান গেয়ে কেউ কেউ বাড়ী বাড়ী ভিক্ষা করে বেড়ায়। মেহেরপুর অঞ্চলে প্রচলিত মানিকপীরের গানের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো ঃ
“মানিকের নামে তোমরা হেলা করো না
মানিকের নাম থাকলে বিপদ হবে না।
মানিকের নামে চালপয়সা যে করিবে দান
গাইলে হবে গরু বাছুর ক্ষেতে ফলবে ধান।”
ভাসান গান ঃ মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে ভাসান গানের দল রয়েছে। এই গানের বৈশিষ্ট হলো ঃ তিনটি পালা করে গায়করা গান গেয়ে থাকেন। জন্মপালা, বাঁচার পালা ও মৃত্যুপালা। মৃত্যু পালা হচ্ছে শ্রোতাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। শীতকালে বাড়ী বাড়ী ভাসান গানের আসর বসে থাকে। সারারাত ধরে এ গানের আসর চলে থাকে। ভাসান গানের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো ঃ
“ওকি সাধ আছে হে দিতে লকায়ে বিয়ে
আর কিছুদিন রাখবো ঘরে ধলো খেলা দিয়ে।”
বিয়ের গান ঃ লোক সংস্কৃতির ভান্ডার অফুরন্ত। প্রতিনিয়ত এর উপাদন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আধুনিকতার উষ্ণ আবেদনের প্রেক্ষিতে অতীতের অনেক মূল্যবান লোকসংস্কৃতি হারিয়ে গেছে। তবে মেহেরপুরের গ্রামগুলোতে অশিক্ষিত, মুর্খ মেয়েরা অনায়াসে শত শত পুংক্তি বিয়ের গান অনর্গল মুখস্ত বরে যেতে পারে। এ সমস্ত গান তারা নিজেরাই সৃষ্টি করে থাকে।
বিয়ের গান ঃ “দুলাভাই গিয়েছে শহরে,
আনবে নাকেরনথরে
সেই নথ নাকে দিয়ে
নাক ঘুরিয়েনাচবোরে।”
আরেকটি বিয়ের গানের কিছু অংশ ঃ
“গাঙ্গের ধারে বাধলাম বাড়ি
ডাবি নারিকেল সারিসারি
আমি বিবিকে পরাতে চেয়েলাম
মানিকরতন।”
সারীগান ঃ এই গান হচ্ছে কর্ম সংগীত। মেহেরপুর অঞ্চলে শারীগানের প্রভাব আজো বিদ্যামান। পাকা ঘরের জলছাদ পেটানো কোন ভারী কাজের সময় মনে জোর সৃষ্টির জন্য শারীগান গাওয়া হয়ে থাকে।
জারীগান ঃ জারীগান মূলত ঃ ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে সৃষ্টি। মেহেরপুর অঞ্চলে জারীগান মর্হরমের সময় গায়করা দলবদ্ধ হয়ে বাড়ীবাড়ী গেয়ে বেড়ায়। যাদবপুরের বেলাল হোসেন বয়াতি জারীগানের গায়ক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও অনেক জারীগায়ক দল এ অঞ্চলে রয়েছে। জারীগানের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো ঃ
“ঈমান যে না আনিবে মক্কার উপরে
গুনাগার হয়ে যাবে দোযখ মাজারে
আরে রোমের ও শহরে ছিল
ইব্রাহিম পায়গম্বর.........
বহুদিবস বাদশাহী করে এই দুনিয়ার পর।”
শাস্ত্রগান ঃ একটানা বাদলার দিনে শাস্ত্র গানের কদর দেখা যায়। জমিতে নিড়ানোর সময় অথবা ধান লাগানোর সময়ে শাস্ত্র গান গাওয়া হয়। গ্রামের গৃহস্তের বাড়ীর বৈঠক খানায় বৃষ্টির দিনে কখনো কখনো শাস্ত্রগানের আসর বসে থাকে। শাস্ত্রগানের কাহিনী অনেকটা বর্ণনামুলক। শাস্ত্রগানের উপমা।
“ইমান খাঁটি ভবের খুটি শাস্ত্রের পরিচয়
ইমান দিয়ে দেলকে আগে খাঁটি করা চাই,
নইলে নামাজ হবে নয়
আছে সত্য ঠিক যথার্থ তোমারে জানাই।”
পুঁথিগান ঃ “ওরে ভাই বলি তাই আজব ঘটনা
ওরে সাপ খেলাই সাপুড়ের মেয়ে
নামেতে জরিনা
জরিনার মা নাই বাপ নাই
দাদির কাছে থাকে।
ভাটিয়ালী গান ঃ মেহেরপুরের গ্রামাঞ্চলে এক সময় ভাটিয়ালী গানের ব্যাপক প্রচলন ছিল। ইদানিংকালে অনেক কমে গেছে। গরুর গাড়ীর গাড়োয়ান, নৌকার মাঝি এবং মাঠের রাখালী ভাটিয়ালী গানের গায়ক হিসাবে আজো এই প্রাচীন লোকসংস্কৃতিকে ধারণ করে রেখেছে।
পালা বা যাত্রাগান ঃ পালা বা যাত্রাগান মেহেরপুরের সর্বত্র এখনো পর্যন্ত অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি লোকসংস্কৃতি হিসেবে বিদ্যামান। রূপবান, ভাসানযাত্রা, ইমামযাত্রা, আসমান সিংহের পালাগান উল্লেখযোগ্য। শীতকালের পুরো সময়টুকু এখানকার গ্রামাঞ্চলে, এমনকি মেহেরপুর শহরের কেন্দ্রস্থলেও যাত্রাগানের আসর বসে থাকে।
৫। প্রচলিত খেলাধুলা:
প্রাচীনকাল থেকেই মেহেরপুরে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা হয়ে আসছে। এর মধ্যে হা-ডু-ডু, ডাংগুলি, গাদন, মার্বেল লাঠিখেলা, নৌকাবাইছ, ঘুড়ি উড়ানো, উল্লেখযোগ্য। দাবা, তাস, লুডু, বাঘবন্দী, পাশা খেলা এ অঞ্চলে বহুকাল ধরেই চলছে। উনিশ শতকের দিকে আধুনিক খেলার মধ্যে ফুটবল, হকি, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, টেবিল টেনিস, লন টেনিস প্রভৃতি কেলা মেহেরপুরে প্রচলন রয়েছে। প্রাচীন ঐহিত্যবাহী খেলাধূলার সাথে বর্তমানে মেহেরপুরের আধুনিক খেলার মান এবং অনুশীলন বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফুটবল ঃ ফুটবল খেলা মেহেরপুরের উনিশ শতকের প্রথম দশকে শুরু হয়েছে বলে প্রবীণ খেলোয়াড়দের কাছ থেকে জানা যায়। বাতাবী লেবুকে ফুটবল হিসেবে ব্যবহার করে খেলা করার প্রবনতা চালু ছিল দীর্ঘকাল ধরে। এরপর ১৯৩৯ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক মেহেরপুরে টাউন ফুটবল ক্লাব প্রথম প্রতিষ্ঠিত করেন। এই ক্লাবের তত্ত্ববধানে বর্তমানের স্টেডিয়াম মাঠে ফুটবল খেলা শুরু হয়।
লাঠিখেলা ঃ “বাংলাদেশের বাঁশের লাঠি বঙ্গে তীতুমীর
বিশ্বব্যাপী পরিচিত বাঙ্গালী জাতির ।”
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীতে বরেন্দ্রভূমির বিদ্রোহী কৈবত্তদের দলপতি দিবেবাক প্রাথমিক হাতিয়ার লাঠিকে ব্যবহার করে তৎকালীন বাংলার দ্বিতীয় পাল রাজবংশের রাজধানী গৌড় দখল করেছিলেন। খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর পূর্বে পাক ভারত উপমহাদেশের যুদ্ধে হাতিয়াররূপে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার প্রচলিত ছিল না। তখন দেশী অস্ত্র উপকরণ হিসেবে যুদ্ধে ব্যবহৃত হতো। সৈন্যদলের পাশ্চত্য ভাগ সাধারণতঃ লাঠি অথবা বল্লম তাতে প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হতো। অর্থাৎ যুদ্ধে লাঠিকে প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করার কথা অনুমান করা হয়ে থাকে। উনবিংশ শতাব্দীতে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে ফকির ও সন্নাসীগন কর্তৃক লাঠিকেই প্রথম অস্ত্ররূপে বেছে নেয়া হয়েছে। নারকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লায় সৈয়দ নিসার আলী ওরফে তীতুমীর লাঠিকেই হাতিয়াররূপে ব্যবহার করে বৃটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে অত্যাচারিত কৃষকরা লাঠি হাতেই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। কোন কোন ক্ষেত্রে বিজয়ী হয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যময় লাঠিখেলার বিশাল ইতিহাস মেহরপুরে ছাড়িয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর প্রেসিডেন্টের জন্মস্থান হচ্ছে মেহেরপুরে।
মাল খেলা বা কুস্তি খেলা ঃ প্রাচীন সংস্কৃতির ঐতিহ্যের প্রশাখায় মাল বা কুস্তি খেলা এক অনবদ্য নৈপুূন্য সম্পন্নখেলা। এক সময় মালখেলা মেহেরপুরে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। ১৯৪৫ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মেহেরপুরে মাল খেলার প্রচলন লক্ষ্যণীয় ছিল। পরবর্তীতে ক্রমে ক্রমে এ খেলার বিলুপ্তি ঘটেছে। মেহেরপুরের গ্রামঞ্চল মাল খেলার প্রচলন ছিল সর্বাধিক।
লনটেনিস ঃ যদিও অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও আধনিক খেলা তবুও মেহেরপুরে ১৯৪৫ সাল থেকে এর প্রচলন রয়েছে। তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমা প্রশাসকের বাসভক্ষনের পূর্বদিকে বর্তমানে জেলা পরিষদের পিছনে লন টেনিসের খেলার জন্য একটি গ্রাস কোর্ট স্থাপিত হয়েছিল। তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এম এ তাহের এই গ্রাস কোট স্থাপন করেছিলেন বলে অনুমান করা হয়। অবশ্য ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পরপর লন টেনিস মাঠ নির্মাণ করেন।
মেহেরপুরের বৈবাহিক অবস্থার বিবরণ ঃ মেহেরপুরের বৈবাহিক অবস্থার বিবরণ সমগ্র বাংলাদেশের ন্যায় একইরূপ। প্রাচীন আমলে মুসলিম সূরা অনুসারে বিবাহের কার্যাদি সুসম্পন্ন করা হতো মৌলভী এবং মসজিদের ইমামদের দ্বারা। এ সময় বিবাহ নিবন্ধন করার কোন আইন বা রেওয়াজ প্রচলিত ছিল না। ১৮৭৬ সালে এই উপমহাদেশে বিবাহ নিবন্ধন ১ আইনের ৬ ধারার বিধানমতে যেকোন বিবাহ বা তালাকের বিষয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চালু করা হয়। দেশে এ আইনের প্রচলনের পর মেহেরপুর মহকুমার সর্বপ্রথম মৌলভী আবদুল হাকিম সরকারী মুসলিম বিবাহ নিবন্ধক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তিনি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মেহেরপুর মহকুমায় এ দায়িত্ব পালন করেন। গাংনিতে মৌলানা নাজির আহমেদ সমসাময়িক সময়ে অত্র এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৬১ সালে মুসলিম পারিবারিক অর্ডিন্যান্স জারী করা হয়। এই অর্ডিন্যান্সের বলে ইউনিয়ন পর্যায়ের চেয়ারম্যানরা স্ব স্ব ইউনিয়নের এক বা একাধিক বিবাহ নিবন্ধক নিয়োগ করার ক্ষমতা প্রাপ্ত হন।
এ অঞ্চলে প্রাচীনকাল থেকে বাল্যবিবাহের প্রথা চালু রয়েছে। বর্তমানে বাল্যবিবাহ আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ হলেও মেহেরপুরের গ্রামাঞ্চলে শতকরা আশি ভাগই বাল্যবিবাহ হয়ে থাকে। তবে পৌর এলাকায় বাল্যবিবাহের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
আতিথিয়োতা ও আচার ব্যবহার ঃ মেহেরপুরের সর্বস্তরের অধিবাসীদের জীবনধারায় অকৃত্রিম আতিথিয়োতা আজো বিরাজমান। গ্রামাঞ্চলে গোরস্থ বাড়ীতে বেড়াতে গেলে চিড়া, মুড়ি মুড়কী অথবা গুড়ের শরবৎ দেওয়ার রেওয়াজ চালু ছিল। আর সেই সাথে মুরগীর গোস্ত দিয়ে ভাত খেতে দিতো। এছাড়া নারিকেলের নাড়–, দই, সন্দেশ খাবার হিসাবে দেয়া হতো বিয়ে মুসলমানী, অন্ন প্রসন্ন জন্মবার্ষিকীতে অনেক সময় আত্মীয় বেড়াতে আসলে তাদের লুঙ্গী গেঞ্জী, শাড়ী শায়া উপহার দেয়ার রীতি রয়েছে। বিয়ের কথাবার্তা পাকাপোক্ত হয়ে গেলে লগনে বিশেষ করে রুই মাছ আর এক হাড়ি মিষ্টি বর কনে উভয় পক্ষের বাড়ীতে পাঠানোর রেওয়াজ রয়েছে।
No comments:
Post a Comment